ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। এটি হলো পুতিনের চার বছরের মধ্যে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর, যেখানে তাদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই সময় যখন নয়াদিল্লি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ওপর নতুন করে শুল্ক চাপানোর বিষয় পর্যালোচনা করছে। গত দশকে ভারতের মূল অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়া ভারতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। মস্কো জানিয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বাড়াতে চায় এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করেছে। বর্তমানে এই বাণিজ্য মূলত জ্বালানি আমদানির ওপর বেশি নির্ভরশীল। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে রুশ জ্বালানির বাজার ছোটে গেলে ভারত যায় কম দামে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কিনতে, তবে মার্কিন শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার কারণে এই আমদানি সাময়িকভাবে কমে গেছে। বৈঠকের শুরুতে মোদি বলেন, ভারত নিরপেক্ষ নয়, বরং শান্তির পক্ষে রয়েছে। তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের গৃহীত প্রতিটি উদ্যোগকে সমর্থন করেন। পাল্টা জবাবে পুতিন শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ভারতের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে যা ঘটছে, তা নিয়ে আলোচনা ও সমঝোতা সম্ভাব্য। তিনি আরও বলেন, ভারত এবং রাশিয়া প্রযুক্তি, মহাকাশ, প্রতিরক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী সহযোগিতা করছে এবং আগামীতেও এগিয়ে যেতে আগ্রহী। এই দুই নেতা শ্রম, বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি ও অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা করবেন। পুতিনের সফরসঙ্গী একটি বড় প্রতিনিধি দল, যার মধ্যে রয়েছেন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী আন্দ্রেই বেলউসোভ। তিনি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ভারতের জ্বালানি উৎপাদনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। মার্কিন চাপের প্রতি সমালোচনা করে পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে জ্বালানি কেনার ব্যাপারে বাধা দেয়, অথচ তারা নিজেদের পারমাণবিক জ্বালানি কিনছে। তিনি প্রশ্ন করেন, যদি তারা পারে, তাহলে ভারত কেন পারেন না। চলতি বছর ভারতের সাথে রাশিয়ার বাণিজ্য কিছুটা পতন হলেও ব্যবসা স্বাভাবিক রয়েছে। ভারতের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কুদানকুলামে রাশিয়া সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। পুতিন বলেছেন, এই প্রকল্পের ছয়টি চুল্লির মধ্যে দুটি এখন সম্পূর্ণভাবে চালু হয়েছে এবং সব চুল্লি চালু হলে ভারতের জ্বালানি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রতিবেদনের মতে, রাশিয়ার রোসাটম সংস্থা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। পুতিন দুই দিনের ভারত সফরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা, পারমাণবিক প্রযুক্তি ও জ্বালানি ক্ষেত্রে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তিনি হাস্যরস করে বলেন, ছোট মডুলার চুল্লি ও ভাসমান পারমাণবিক কেন্দ্র তৈরির কথাও ভাবা যায় এবং চিকিৎসা বা কৃষিতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগের বিষয়েও আলোচনা হয়। তিনি দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন, রাশিয়া ভারতের জ্বালানি সংগ্রহের নিশ্চিত সরবরাহকারী। মোদি বলেন, ভারত-রাশিয়া বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, যা আমাদের জনগণের জন্য অমূল্য। তিনি পুতিনের ভারত সফরের জন্য শুভকামনা জানিয়ে, তাঁকে ভারতে স্বাগত জানান।






