গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোর্ডঘর দাড়িয়াপুর এলাকায় গত রবিবার রাতে এক নিষ্ঠুর পরিবারের থেকে ফেলে দেওয়া ফুটফুটে ছোট শিশুটি এখন বেঁচে রয়েছে। এই ঘটনা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায় এবং সমাজে মানবিকতার প্রশ্ন তোলে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে, একই এলাকায় একটি মানবিক পরিবার এই শিশুকে খুঁজে বের করে তার জীবন উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সকলের প্রশংসার বাণী শুনিয়েছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সূত্র জানায়, রবিবার রাতে এক নিষ্ঠুর পরিবার তাদের নির্দোষ শিশু সন্তানকে ফেলে চলে যায়। পরের দিন সকালে, সেই শিশুটি বোর্ডঘর দাড়িয়াপুরের একটি ব্রিজের কাছাকাছি পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা।
প্রাথমিক চেহারার অবস্থা দেখে মনে হয়, শিশুটি খুবই দুর্বল, কনকনে শীতের মধ্যে তার শরীর ঠান্ডায় জমে গেছে। শিশুটির নাক, মুখ, চোখ, মাথাসহ পুরো শরীরের অবস্থা ছিল ক্ষতিগ্রস্ত। তার পায়ে কোনো হাসপাতালের নাম নেই, যা দেখলে বোঝা যায়, হয়তো শিশুটিকে অবহেলার সাথে এভাবে ফেলে রেখে যায় একজন।
আনুমানিক বয়স দুই দিন বলে ধারণা করা হচ্ছে শিশুটির। মুহূর্তে এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন মানবিক গ্রুপ ও সাধারণ মানুষ এই ফোটো দেখতে পেয়ে ভিড় জমান, শিশুটির খবর শুনে বিভিন্ন মহল অনুসন্ধানে নামে।
এরই মধ্যে, ওই শিশুকে উদ্ধার করেন এলাকার সালাম হোসেন ও তার পরিবার। তারা শিশুটির শরীরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন, প্রয়োজনীয় খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা করেন। বিষয়টি তারা কালিয়াকৈর থানায় ও স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানান।
এই ঘটনায় সমাজে গভীর ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ পেয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, একজন ব্যক্তি বা পরিবার এভাবে শিশুকে এভাবে ফেলে দিতে কেমন নিষ্ঠুর হতে পারে। কিন্তু এই মানবিক পরিবারের সিদ্ধান্তে সবাই প্রশংসা করেছেন। তারা বলেন, এই শিশুটিকে তারা নিজের সন্তানের মতোই লালন-পালন করবেন।
ওই পরিবারের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে, নতুন শিশু পেয়ে পরিবারের সবাই খুবই খুশি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের এই মানবিক উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।
শিশুটির নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত বাবা সালাম হোসেন বলেন, আমি সকালে হাটতে বের হই, তখন ওই ব্রিজের পাশে কিছু লোক শিশুটিকে দেখতে পায়। তারা আমাকে জানান, এরপর আমি শিশুটির দিকে এগিয়ে যাই। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের জানালে তারা থানায় খবর দেন। শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেছি। পরিবারের খোঁজে বা পরিচয় জানা না থাকায়, আমি ও আমার পরিবার এই শিশুটিকে লালন-পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সবাই এই শিশুটির জন্য দোয়া ও শুভকামনা করেন।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম ফখরুল ইসলাম বলেন, আমি এই ঘটনাটির ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত জানি না। তবে, যে পরিবার এটি করেছে, তারা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।






