ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০০৩ জনে দাঁড়িয়েছে। শনিবার দেশটির উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, এ দুর্যোগে এখনো অন্তত ২১৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এই বিপর্যয়টির ফলে গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশের উত্তরপূর্ব সুমাত্রা দ্বীপে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যা আঘাত হানে।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় প্রায় ২৭০০ জন আহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দুর্যোগপ্রভাবিত এলাকাগুলোর খোঁজখবর ও ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হলেও অব্যাহত বৃষ্টিপাত এবং দুর্গমতা সেখানে উদ্ধার কাজের গতি কিছুটা বাধাগ্রস্ত করছে।
অভিঊপ্ত পরিস্থিতির কারণে কাদামাটি ধসে ঘরবাড়ি, রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম জটিল হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন উজাড়, অবাধ খনন ও বনভূমি দখলের ফলে প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যহত হচ্ছে। উজাড়ের কারণে ওই এলাকা ঝুঁকিতে পড়ছে।
জাকার্তা পোস্ট জানিয়েছে, ২০২৪ সালে দেশে ব্যাপক বন উজাড়ের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে, যা আগের বছর থেকে ৫৪ হাজার ৩০০ হেক্টর বেশি। এই তথ্যের পেছনে নুসানতারা অ্যাটলাস সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড গ্যাভোর বলেন, বেশিরভাগ ক্ষতি সুমাত্রার ואং হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে এই অঞ্চলেই ৪৪ লাখ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে, যা সুইজারল্যান্ডের চেয়েও বড়।
এছাড়াও, সম্প্রতি বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের তদন্তে দেখা যাচ্ছে, বন উজাড়ের জন্য অনেক কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে বনপ্রভাব ধ্বংসের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এই অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কাও মারাত্মক আবহাওয়ার কবলে পড়েছে। একই সঙ্গে চরম আবহাওয়ার কারণে শত শত মানুষের জীবন Schatz গেছে।
ডিসেম্বরের শুরুতেই সুমাত্রা ও শ্রীলঙ্কার পাহাড়ি এলাকাগুলোতে প্রবল বৃষ্টি ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। বর্তমান সময়ে বন্যা ও ভূমিধসের আপৎকালীন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় জনমনে আতঙ্ক এবং ক্ষোভ বাড়ছে।
দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থার মুখপাত্র আবদুল মুহারি জানান, বৃহস্পতিবার বিকালের মধ্যে সুমাত্রার বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৯৯০ এ পৌঁছেছে। এটি এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ২২০ জনের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, চলমান মৌসুমি বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ভূমিধস ও বন্যার আরও আশঙ্কা রয়েছে। অচিরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতির আরও খারাপ হতে পারে।
২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামির স্মৃতি এখনও মানুষ ভুলে যায়নি। আচেহ প্রদেশে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেষ্টা করছে মানুষ, তবে ত্রাণ বিতরণের গতি নিয়ে ক্ষোভ ঝরে পড়ছে জনমণের মধ্যে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে একটি সাধারণ মানুষের ভাষ্য, ‘মানুষ জানে না তারা কার ওপর ভরসা করবে’। আরেকজন বলেন, ‘বন্যার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও ঘরের ভেতর পরিষ্কার করতে পারছি না, বাইরে কাদা জমে থাকায় কাজের ক্ষেত্রগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি সহায়তা না পেয়ে মানুষের মাঝে হতাশা এবং ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে।’






