ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আইনপ্রণেতারা অভিবাসন নীতি কঠোর করার পক্ষে অবস্থান নেয়ার ফলে বাংলাদেশিসহ অনেক দেশের নাগরিকদের জন্য ইউরোপে আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ আরও সংকুচিত হয়ে আসছে। গত বুধবার, ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অধিবেশনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব অনুমোদিত হয় যেখানে অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ডানপন্থী ও কট্টর ডানপন্থী আইনপ্রণেতাদের সমর্থনে পাস হওয়া এই প্রস্তাবের ফলে, বাংলাদেশসহ কিছু নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয়প্রাপ্তির জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন।
প্রস্তাবদুটি অনুমোদনের মধ্যে একটি তালিকা তৈরির বিষয়ে যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকা প্রকাশ করবে। এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আড়াল হিসেবে কোসোভো, কলম্বিয়া, মিসর, ভারত, মরক্কো ও তিউনিশিয়া রয়েছে। ইউরো নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো দেশের নাগরিক যদি ‘নিরাপদ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়, তবে তার আশ্রয় আবেদন মঞ্জুরের প্রক্রিয়া অনেক কঠিন ও জটিল হয়ে যাবে।
অপর প্রস্তাব অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীদের এখন থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যাবে। বিশেষ করে যদি কেউ ‘নিরাপদ’ তালিকাভুক্ত দেশের বংশোদ্ভূত হন, তাহলে তাকে অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশের নিয়ম অনুযায়ী স্থানান্তর করা হতে পারে। এই পদক্ষেপকে চরম ডানপন্থী আইনপ্রণেতা ফ্যাব্রিস লেগেরি শরণার্থী চাপ কমানোর জন্য জরুরি বলে ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যদিকে, বামপন্থী আইনপ্রণেতা ড্যামিয়েন কারেমে একে ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির জন্য ‘বড়দিনের উপহার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, কারণ এর ফলে মেলোনির পরিকল্পনা অনুযায়ী আলবেনিয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্ভব হবে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই নতুন পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, তৃতীয় দেশে আশ্রয়প্রার্থী পাঠানোর ফলে তারা গুরুতর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। ইউরোপীয় কমিশন আশ্বাস দিয়েছে যে, যেকোনো দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠানো হলেও, সেখানে মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করা হবে। উল্লেখ্য, গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন, যার মধ্যে ৪ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া হয়। তবে এই নতুন নীতি উপেক্ষা করলে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।






