গাজার সমুদ্রতীরবর্তী গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত সম্পদের লাভজনক ব্যবহারের মাধ্যমে সেখানে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা চলছে। এই উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, আলোচনা বিভিন্ন দিক থেকে চলমান থাকলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। এ ধারায় একটি প্রস্তাব রয়েছে যে, আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডনক) গাজার অপ্রচলিত গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানায় অংশীদার হতে পারে এবং এই সম্পদ থেকে প্রাপ্ত অর্থ আবার গাজার পুনর্গঠনে ব্যয় হবে। তবে এসব আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং কোনো নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ডেমক্র্যাডিক সূত্রের মতে, ডিসেম্বরের দিকে গাজার গ্যাস থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা আবারও আলোচনায় আসে। ২০০০ সালে গাজার সামুদ্রিক এলাকায় গ্যাসের খোঁজ পাওয়ার পর থেকে এর উন্নয়নের উদ্যোগ চলছিল। এই গ্যাসক্ষেত্রের মালিকানা দুটি প্রতিষ্ঠান রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত—ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্যালেস্টাইন ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এবং গ্রিসভিত্তিক এক প্রবাসী ফিলিস্তিনি পরিবারের মালিকানাধীন কনসোলিডেটেড কন্ট্রাক্টরস কোম্পানি। এই প্রকল্পের প্রায় ৪৫ শতাংশ মালিকানা এক আন্তর্জাতিক পার্টনারের জন্য সংরক্ষিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ও পরবর্তী যুদ্ধের আগে মিসর এই মালিকানায় অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। জাতিসংঘ এই যুদ্ধকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গাজার গ্যাস প্রকল্পের বিশ্লেষক মাইকেল ব্যারন বলেছেন, ‘প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক।’ তিনি জানিয়ে যান, ১৫ বছর আগে এই প্রকল্পের জন্য ধরা হয়েছিল ৭৫ কোটি ডলার ব্যয়, এবং এর মাধ্যমে প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের আয় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এর মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বছরে ১০ কোটি ডলার করে লভ্যাংশ পেত। তিনি যোগ করেন, ‘এটি এখন ফিলিস্তিনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, যা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।’ জাতিসংঘের আনুমানিক খরচ অনুযায়ী, গাজা পুরোপুরি পুনর্গঠনে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন। তবে, মার্কিন ও ইসরায়েলি নেতৃত্ব এই পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে এখনই এগিয়ে নিতে নারাজ। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের নেতৃত্বে মার্কিন দপ্তর গাজার অর্ধেক এলাকায় অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। সাবেক পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, তিনি মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনীতিকদের সঙ্গেও এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন, তবে তারা এই বিভক্তি ও পুনর্গঠনের বিরোধিতা করেছেন। ট্রাম্পের আঞ্চলিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাও বন্ধ হয়ে গেছে, কারণ আরব ও মুসলিম দেশগুলো হামাস ও ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে পড়ে যেতে ভয় পাচ্ছে। কাতার ও সৌদি আরব গাজার পুনর্গঠনে অর্থায়নে আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে; কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অন্যরা যা ক্ষতি করেছে, তার জন্য তারা আর টাকা দেবেন না। ’ সেই সময়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেননি। এই পরিস্থিতিতে, সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় প্রধান উপসাগরীয় অংশীদার হিসেবে উঠেছে, এবং বর্তমানে গাজায় সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী। ট্রাম্প প্রশাসন কেয়ার মতো আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোও কৌশলে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই পরিকল্পনাগুলো গাজার পুনর্গঠনে মানবিক উদ্যোগের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থের ইঙ্গিত দেয়।






