সুদানের চলমান গৃহযুদ্ধে দারফুরের পর এবার সংঘাতপূর্ণ কোরদোফান অঞ্চল দ্রুতই নতুন আতঙ্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। বুধবার থেকে ডিলিং শহরে অভ্যুত্থানমুখী হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৬ জন বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের তথ্য বলছে, আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ও তাদের মিত্র সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট–নর্থ (এসপিএলএম-এন) ভয়ংকর আঘাত হেনেছে ডিলিং শহরের আবাসিক এলাকায়, যেখানে ভারী অস্ত্রের মাধ্যমে গোলাবর্ষণ চালানো হয়েছে। এই হামলায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও গুরুতর আহত হয়েছে, আর এটি মূলত বেসামরিক জনগণের ওপর ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড বলে সংস্থাটি নিন্দা জানিয়েছে।
এই হামলার ঘটনা সামগ্রিকভাবে কোরদোফান অঞ্চলের চলমান সংঘর্ষেরই অংশ। এই অঞ্চলে ডিসেম্বরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘাতের কেন্দ্রটি ধীরে ধীরে দারফুরের মূল অঞ্চল থেকে সরে এসে দেশের মধ্যাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর দিকে এগোচ্ছে, যা সামনের দিনCloser বড় ধরনের যুদ্ধের পরিণতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ডিলিংয়ের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ব্যাপক চাপে পড়েছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলমান অবরোধ এবং বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব—যেমন কলেরা ও ডেঙ্গু—এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, অক্টোবর মাস থেকে কোরদোফানের তিনটি রাজ্য থেকে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক এই পরিস্থিতিকে দারফুরের গণহত্যার পুনরাবৃত্তি আশঙ্কার সূচনা হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন।
গত ১৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরদোফানের রাজধানী কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। এই ঘটনার পর, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই হামলাকে তিনি যুদ্ধাপরাধের আওতায় দেখছেন। নিরাপত্তার হুমকির কারণে জাতিসংঘ তাদের লজিস্টিক ঘাঁটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই গৃহযুদ্ধের মধ্যে সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও তার সাবেক উপপ্রধান মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেদতি’ দাগালো মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। বিভিন্ন পর্যবেক্ষকের মতে, এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং এক কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত, যা জাতিসংঘের মতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মানবিক সংকট।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের তথ্য মতে, সাম্প্রতিক দু’দিনে দক্ষিণ কোরদোফানের ডিলিং শহরে আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে যুদ্ধরত পক্ষগুলো। এই গোলাবর্ষণে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও হতাহত হয়েছেন। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, এই হামলায় deliberately জনবহুল এলাকাকে লক্ষ্য করে আঘাত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি নির্দেশ করে, সংঘাত পশ্চিম দারফুর থেকে সরে এসে মূল কেন্দ্রীয় অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছেছে, যা এখনো যুদ্ধের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে আরও কঠোর সম্ভাব্য চাপ দিয়ে সহিংসতা বন্ধ করতে ও মানবিক সহায়তা দ্রুত বিতরণের পথ সুগম করতে।
সুদানে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ড্রোন হামলার ফলে দেশটির রাজধানী খার্তুম ও পোর্ট সুদানসহ বেশ কয়েকটি শহর অন্ধকারে ডুবে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আতবারা শহরে আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে, যেখানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
একজন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা বলেছেন, ড্রোনের প্রথম হামলার পর সৃষ্ট আগুনে নেতৃত্ব দেওয়া দুইজন আহত হন। দ্বিতীয় হামলায় উদ্ধারকর্মীদেরও আহত হয়েছে। এই ব্যাপারে গোটা পরিস্থিতির শঙ্কাজনক অবস্থা অব্যাহত রয়েছে।






