বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিএনপির এক ওয়েবিনারে বলেছেন, দেশের সংশ্লিষ্ট পত্রিকা অফিসে হামলা সম্পূর্ণরূপে লজ্জাজনক। তিনি উল্লেখ করেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের অফিসে ডাকাতি, জ্বালিয়ে দেওয়া ও পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার মাধ্যমে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই দৃশ্যগুলো বিশ্ববাসীর কাছেও প্রকাশ পেয়েছে, যা অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের বিষয় নয়। রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এই সভা বিএনপি সভাপতি তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে, যেখানে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদকমণ্ডলী, রেডিও ও টেলিভিশনের বার্তা প্রধানগণসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের ব্যক্তিত্বরা অংশ নেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই হামলার ঘটনায় আমরা শুধু দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা করে বিষয়টি মেটাতে পারব না। সরকারই এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। তিনি প্রশ্ন করেন, এই হামলার বিষয়ে ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট থাকলেও কেন তা উপেক্ষা করা হলো? কাদের হাতে আমাদের রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে তা নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখেছি কিছু সময় পরে সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে, এ জন্য অভিযোগ করেন। তিনি প্রশ্ন করেন, আমাদের রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কি سيكون এভাবেই অন্ধকারে ডুবতে থাকা?
বিএনপির নেতা আরও বলেন, কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে হামলার হুমকি ও আক্রমণ চলতে দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু স্থাপনা ও পথ ঘappত্রে শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের পরিবর্তে অস্থিরতা ও সংঘাতের সূচনা হচ্ছে। তিনি মন্তব্য করেন, সরকারের দুর্বলতা এবং অব্যবস্থাপনার কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা বেশ দীর্ঘদিনের; বাংলাদেশের সব মানুষই পুরোপুরি রাজনৈতিক স্বাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে নিরপেক্ষ, কার্যকর সাংবিধানিক গুণাবলী নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্রের মূল রক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারে।
মিডিয়া ও সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, অনেকেই গণমাধ্যমকে চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে দেখে থাকেন। যদিও অনেক সাংবাদিকের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকতেই পারে, তবু দেশের স্বার্থে সবসময় সাংবাদিকরা যেন সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন, এই প্রত্যাশা রয়েছে। জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে, কারণ সরকার আমাদের এই দায়িত্ব দিয়েছেন। অতীতে ভুল থাকলেও তাদের ভুল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যাতে ভবিষ্যতেও সেগুলো না হয়। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও স্বাধীন গণমাধ্যম।
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, জনগণ আশা করছে, তার ফেরার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে। দীর্ঘ ১৮ বছর নির্বাসিত থাকার ব্রতকামনা সমাপ্ত করে তিনি দেশে ফিরেছেন। এই প্রত্যাবর্তনকে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে কাজে লাগানো হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শফিক রেহমানসহ প্রবীণ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে বর্বর ও অমানবিক আচরণ করা হয়েছে, তা ফ্যাসিবাদী শাসনামলের দুঃস্বপ্নের মতো। এই ধরনের অত্যাচার ও দমন-পীড়নের মধ্যেও আমাদের অনেকেরই জীবনের স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে। তরুণ নেতাদের প্রতি অকৃতকার্য আতঙ্ক ও মৃত্যুর হুমকি দিয়ে থাকলেও আমরা এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাই। তারেক রহমানের প্রতি কটাক্ষ বা জীবন ঝুঁকির বিষয়গুলো আমাদের দুঃখে ডুবিয়ে দেয় এবং এর প্রশমনে সবাইকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান, আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, দৈনিক খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল, কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, যুগান্তরের সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার, এনাম আবেদীন, আজকের পত্রিকার সম্পাদক কামরুল হাসান, ইনকিলাবের সম্পাদক আ ক ম বাহাউদ্দীন, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদসহ অনেকে।
এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আ. ম. খালেদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, রিজভী এবং মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আহমেদ পাভেল।






