খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক নেতা মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে তাকে রাস্তায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার বলে ধারণা করা হলেও পুলিশের তদন্তে ভিন্ন তথ্য প্রকাশ পায়। প্রকৃতপক্ষে, তিনি রাস্তায় নয়, সোনাডাঙ্গা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদক সেবনের সময় নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তনিমা ওরফে তন্বী নামে এক নেত্রীকে আটক করেছে, তিনি এনসিপির সহযোগী সংগঠন যুবশক্তির একজন নেতা।
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মোতালেব ও তন্বী স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে খুলনার আল আকসা মসজিদ সরণির ‘মুক্তা হাউস’ নামের একটি ভবনের নিচতলায় ভাড়া থাকা ফ্ল্যাটে থাকতেন। সোমবার সকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মোতালেব দাবি করেছিলেন, তাঁকে গাড়ির রাস্তা থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। তবে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখেছে, তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ফ্ল্যাট থেকে বের হওয়া ছবি ফুটে উঠেছে। পরে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে বিদেশি মদ, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম ও একটি গুলির খোসা উদ্ধার করে। বাড়ির মালিকের ভাষ্যমতে, তন্বী নিজেকে এনজিওকর্মী পরিচয় দিয়ে ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে নিয়মিত অপরিচিত পুরুষদের আগমনের উপস্থিতি ও অসামাজিক কার্যকলাপ চালানো হত। এর জন্য তাকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশও দেওয়া হয়েছিল।
মোতালেব শিকদারের অতীত জীবনও আলোচনায় এসেছে। তিনি আগে যুবলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। খুলনার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর জাকির হোসেন বিপ্লবের সঙ্গে revelou হন এবং শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের কাছাকাছি ছিলেন। ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর তিনি ভোল পাল্টিয়ে এনসিপিতে যোগ দেন এবং খুলনা বিভাগের শ্রমিক শক্তির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে এলাকায় কথা যায়, তাঁর বিরুদ্ধে শীতবস্ত্র বিতরণের নামে বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।
খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, এই ঘটনাটি মূলত সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও মাদক ও অনৈতিক কার্যকলাপের ফল। গুলিটি মোতালেবের কানের চামড়া দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় তিনি এখন শঙ্কামুক্ত এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীর্ণ। এরই মধ্যে, এনসিপি’র স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এই ঘটনায় দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি মোতালেবের ব্যক্তিগত ঘটনা, যার সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। পুলিশ এখন পলাতক তন্বীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত করতে চাচ্ছে আর কারা এই ঘটনায় জড়িত, তা খুঁজে বের করতে।






