ফিলিস্তিনের দখলকৃত পশ্চিম তীরে আরও ১৯টি ইহুদি বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গত তিন বছরে অনুমোদিত বসতির সংখ্যার মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৯টিতে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুডিয়া ও সামারিয়ায়’ ১৯টি নতুন বসতি ঘোষণা ও স্বীকৃতি দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভার। তবে এই সিদ্ধান্তটি কবে নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
স্মোট্রিচ বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে একটি ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা ঠেকানোর চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমিতে উন্নয়ন, নির্মাণ এবং বসতি স্থাপনের কাজ অব্যাহত রাখতে বিশ্বাস করি। আমাদের বিশ্বাস, এই পদক্ষেপে আমরা আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো রক্ষা করছি।
অবশ্য, এই সিদ্ধান্ত তখন আসে যখন আন্তর্জাতিক মহল পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।
অপরদিকে, গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৯৪ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। গাজা উপত্যকার ধ্বংসস্তূপে এখনও বহু লাশ চাপা থাকায় এই সংখ্যাটা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানায়, লাশগুলো মধ্য গাজার বিভিন্ন এলাকায় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্ত ও দাফনের জন্য আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। এখনো হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতের সংখ্যা এখন প্রায় ৭০,৭০০ এবং আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি। যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, প্রতিদিনই হামলার কবলে পড়ছেন সাধারণ ফিলিস্তিনিরা।
গাজার বিশ্ববিদ্যালয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে শিক্ষার্থীরা প্রশান্তির জন্য চাপা দেওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই অস্থায়ীভাবে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন গৃহহীন পরিবার। স্কুল ও কলেজগুলো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নতুন করে শিক্ষার জন্য আশার কথা বলছেন। মানাবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে ‘শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বংস’ বলে আখ্যা করেছেন, যা প্রায় দুই বছর ধরে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা থেকে বঞ্চনার কারণ হয়েছে।
এ পর্যন্ত গাজায় ৪৯৪টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩৭টি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে ১২,৮০০ শিক্ষার্থী ও ৭৬০ জন শিক্ষক রয়েছেন, আর জীবিত রয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ইসরা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে অল্প কিছু সুবিধা দিয়ে রয়েছে গাজার শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে বিদ্যুৎ, সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অস্থায়ীভাবে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে, যা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।






