দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি এক নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে, যা সংস্থাটির কাঠামো ও ক্ষমতায় বিশাল পরিবর্তন আনছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অনুমোদনের মাধ্যমে এই অধ্যাদেশটি কার্যকর হয়েছে। এই নতুন বিধানে কমিশনের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি, তদন্তের পরিধি সম্প্রসারণ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এখন থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন অনধিক পাঁচজন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত হবে, যা আগের তিনজনের পরিবর্তে। এই পাঁচজনের মধ্যে অন্তত একজন নারী এবং একজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিশেষজ্ঞ থাকা বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক এই কমিশনারদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। আইটি বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্তির মূল লক্ষ্য হলো আধুনিক ও ডিজিটাল দুর্নীতির রহস্য উন্মোচন ও প্রযুক্তিগত তদন্ত কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা।
নিয়োগের জন্য গঠিত ‘সার্চ কমিটি’ এর নাম পরিবর্তন করে এখন থেকে ‘যাচাই-বাছাই কমিটি’ রাখা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারক, যা আগে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব ছিল। অন্যান্য সদস্যের মধ্যে থাকবেন মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি), সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান, এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক মনোনীত সরকারি ও বিরোধী দলের দুই সংসদ সদস্য। তবে সংসদ ভেঙে গেলে, সংসদ সদস্য ছাড়া এই কমিটি গঠন করা সম্ভব।
দুদকের তদন্ত ও অভিযান সক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথমবারের মতো enforcement ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব সরাসরি আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা আগের বিধির উপর ভিত্তি করে ছিল। পাশাপাশি, মানিলন্ডারিংসহ নানা ধরনের অপরাধের অনুসন্ধানে দুদকের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন থেকে কেবল ঘুষ, দুর্নীতি ও আর্থিক জালিয়াতি নয়, দলিল জালকরণ, প্রতারণা, মুদ্রা পাচার, চোরাচালান, শুল্ক ও কর সংক্রান্ত অপরাধ, পুঁজিবাজারে ইনসাইডার ট্রেডিং ও মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের অপব্যবহারসহ অন্যান্য অপরাধগুলোর তদন্তও দুদকের মাধ্যমে হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এ পরিবর্তনগুলো আনা হয়। যদিও টিআইবি কৌশলগত কিছু সুপারিশ বাদ দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল, তবে সরকারের মতে, এই নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে দুদক আরও বেশি কার্যকর ও স্বাধীন সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অপরাধ ও অর্থ পাচার রোধে এই ক্ষমতাগুলোর ব্যাপক ব্যবহার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে।






