র্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলা গুম ও ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ ঘোষণা করেছেন। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে গুম-নির্যাতনের বিচারের পথ কিছুটা সুগম হলো, যা দীর্ঘ দিন ধরে আলোচনায় ছিল।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ শুনানির প্রথম পর্বে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অব্যাহতির আবেদনগুলো খারিজ করে দেন। এরপর কারাগারে আটক ১০ সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা—যাদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, মো. কামরুল হাসান, মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম—তাদের উপস্থিত করে আদালত। তাদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যা ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
অন্যদিকে, এই মামলার প্রধান আসামি হিসেবে আছেন বর্তমান ও সাবেক সরকারের শীর্ষ কিছু কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ। তারা হলেন শেখ হাসিনা নিজে, পাশাপাশি পলাতক রয়েছেন তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের দুই সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন ও ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, ও সাবেক ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম। পলাতকদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তাদের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এন একসাথে, চলতি বছরের ৮ অক্টোবর মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। এরপর ২২ অক্টোবর ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। আজকের শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল খুব শিগগিরই সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ করবেন। নিরাপত্তার দৃঢ় ব্যবস্থা ও সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটল এই মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।






