কবিগুরুর অম্লান ভাষায় আজ জনতার সম্মিলিত মহাকণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়’। বাংলার কোটি হৃদয় আজ বুকের গভীর থেকে আবেগে ভরে উঠেছে, কারণ দেশের প্রিয় সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে পদার্পণ করছেন। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময়ের নির্বাসিত জীবন শেষে তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দেশের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং রাজনৈতিক নতুন আমন্ত্রণের সূচনা। এর মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে উৎসবের রোদ ছড়ানো এক বিভোর পরিবেশ, যেন আজকের দিনটি বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো নেতাকর্মীর এক মহা মিলনের উপযুক্ত দিন।
প্রথম সূর্যোদয়ের সাথে সাথে চোখ থাকবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ব্যাপক প্রস্তুতিপূর্বক ঘিরে থাকা পূর্বাচলের বিশাল মঞ্চের দিকে। বিএনপি এই প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। লাখো মানুষ নানা পথে, ট্রেন, বাস, লঞ্চ বা নিজের ব্যক্তিগত যানব যান দিয়ে রাজধানী ঢাকায় আসছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন। অনেকে বলছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পরে এই দিনটির জন্য তারা অপেক্ষা করে থাকছেন, আর দীর্ঘস্বপ্নের এই প্রত্যাবর্তনে তারা আবেগের চরম সীমা পার করে থাকছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রবাসী নেতাকর্মীরাও উপস্থিত হয়েছেন, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ও পশ্চিমা দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ঢাকায় এসে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হতে চাইছেন।
তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মী এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বিশেষ করে, ছাত্র-জনতার প্রভাবশালী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তার উপস্থিতি দলের মনোবল বাড়িয়ে তুলেছে। অনেকের মতে, এই প্রত্যাবর্তন অস্থির পরিস্থিতিতে জনগণের ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন স্বপ্নের স্রোত সৃষ্টি করবে। এটি কেবল একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত ফেরার গল্প নয়, বরং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনের চেতনা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জনগণের গভীর আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে পরবর্তী তিন দিন তারেক রহমানের কর্মসূচি বিস্তারিতভাবে পরিকল্পনা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে এসে দলের শীর্ষ নেতারা তাকে স্বাগত জানাবেন, এরপর তিনি JULY এক্সপ্রেসওয়ে ও সংবর্ধনার বিশাল মঞ্চে উপস্থিত হন এক উজ্জ্বল সংবর্ধনা শেষে। তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য দেবেন এবং খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করবেন। পরের দিন জুমার নামাজের পর জিয়াউর রহমানের কবরে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সাভারের স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করবেন। এরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দর্শন ও জনসমাগমে অংশ নিতে যান।
বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর জন্য মোবাইল অ্যাম্বুলেন্স, মেডিকেল স্টেশন, বুথ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে কেউ অসুস্থ বা বিপদে পড়ে না যান। খাবার পানি ও অন্যান্য পরিষেবা ব্যাবস্থার জন্যও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় বিশাল পরিমাণ প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপি তারেক রহমানের জন্য এক বিশাল সংবর্ধনা মঞ্চ তৈরি করেছে, যা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এই অনন্ত সম্মেলনকে লক্ষ্য করে দলের নেতারা অর্ধকোটি মানুষের সমাগমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী এবং ড্রোন পদ্ধতিতে নজরদারি চালানো হচ্ছে।
বিএনপির নেতারা মনে করেন, এসব প্রস্তুতি এবং এই মহা সমাবেশ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শ হয়ে উঠছে। দলের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খলভাবে এই অভূতপূর্ব অনুষ্ঠান সফল করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায়, যানজট ও নিরাপত্তার বিষয়ে সকলের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।






