পানি চাই—পানি। পানির গুরুত্ব মানব জীবনের অপরিহার্য অংশ। তাইপ্রবাদে বলা হয়, ‘তরল সোনা’ অর্থাৎ তেলের চাইতে বেশি জরুরি পানি। ইরাকের দীর্ঘ খরাপীড়িত এই দেশের জন্য এটি একটি অসহনীয় দাবি। মধ্যপ্রাচ্যের এই ঐতিহ্যবাহী দেশের ইতিহাস-শিল্প-সাহিত্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ হলেও গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক খরার মুখোমুখি হয়েছে। ফলে এখন সেখানে পানির জন্য অস্থিরতা ও হাহাকার চলমান।
গত ২১ ডিসেম্বর সিএনএন-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়—প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্র ছিল যেখানে, সেই ‘মেসোপটেমিয়া’ বা বর্তমান ইরাক, গত কয়েক দশকের মধ্যে প্রবল পানির সংকটে পড়েছে। ঐতিহাসিকভাবে দু’টি বড় নদের দেশ হিসেবে পরিচিত এই দেশটির জলসম্পদ এখন সংকটের মুখে, কারণ ঐ দুই নদী—দজলা ও ফোরাত—প্রায় বিলীনের পথে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রাকৃতিক খরার কারণে এই দুই নদী—দজলা ও ফোরাত—প্রায় শুকিয়ে যেতে বসেছে। এর পাশাপাশি আছে মানবসৃষ্ট কারণ, যেমন নদীগুলোর উজানে বেড়ে চলছে বাঁধের নির্মাণ। গতকালও এই দুই নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে কেউ দ্বিধা করেনি।
বিশেষ করে ফোরাত নদীর অবস্থা খুবই খারাপ। সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুসারে, একসময় এই নদী ছিল সম্পদ ও সম্পদের প্রতীক। তবে এখন যা দেখা যাচ্ছে, সেটি হচ্ছে নদীর পানির প্রবাহ ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে। এই নদীর উৎস অবস্থান বর্তমানে তুরস্কে, যেখানে তুরস্ক ও সিরিয়া ব্যাপক সংখ্যক বাঁধ নির্মাণ করেছে। এসব বাঁধের ফলেই ইরাকের পানির প্রবাহ অনেকটাই কমে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ տարին ধরে যুদ্ধ, অপ্রতুল সেচ ব্যবস্থা ও সরকারের অব্যবস্থাপনা এই সংকটের জন্য আরও বেশি দায়ী। বর্তমান পরিস্থিতিতে চার কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ পানির সংকটে ভুগছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে, যা গত শতাব্দীতে আগে কখনো হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তুরস্কের বাঁধ ও বাঁধের কারণে পানির প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে, ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মুখতার খমিস বলেন, “তুরস্কে নদী দুটির ভিত্তি বাঁধ নির্মাণের ফলে ইরাকে পানির প্রবাহ অনেক কমে গেছে।”
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য ও ইরাকের অনেক অঞ্চল থেকে মানুষ জীবনযাত্রার পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। বাবেল প্রদেশের আহমেদ আল-জাশামি früher কৃষি কাজ করতেন। এখন তিনি নির্মাণসামগ্রীর দোকানে কাজ করেন। প্রচণ্ড পানির অভাবে তার ফলের বাগান শুকিয়ে গেছে। টাকার অভাবে বাগান বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। বর্তমানে তিনি বাগদাদের ফাজুল্লার এক ট্যাক্সি চালকদের একজন। তিনি বলেন, ‘সেচের পানি পাওয়া এখন অসম্ভব।’
সম্পূর্ণ পরিস্থিতি স্পষ্ট করছে যে, ইরাকের ভবিষ্যৎ খুবই সংকটাপন্ন, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেখানে একসময় প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্র ছিল, আজ সেখানে পানির জন্য জীবনদেহের সংগ্রাম চলছে।






