রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য আশার কথা। এর পাশাপাশি পেঁয়াজের দামও কিছুটা স্বস্তিদায়ক অবস্থানে ফিরে এসেছে। মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় মধ্য ও নিন্মবিত্ত পরিবারের মধ্যে আনন্দের ঢেউ ফিরে এসেছে। তবে এর ফলে সবজি ও পেঁয়াজের দাম কমলেও তেল, ডাল, মাছ ও মাংসের বাজারে এখনো আগের মতো অস্থিরতা বজায় রয়েছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর রায়সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়, শীতের সবজির ভাঁড়ে এখন বাজার পরিপূর্ণ। নতুন আলু, শিম ও টমেটোর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেক কমে গিয়ে ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ছড়িয়ে পড়েছে। তবুও, বাজারে মুরগি, ডিম, মাছ ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
মlicherweise মাছ, মাংস ও ডিমের দাম একই রকম থাকলেও প্যাকেজে সামান্য দাম কমেছে পাকিস্তানি মুরগির। যেখানে আগে এটি ৩০০ টাকার ওপরে বিক্রি হতো, এখন সেটা ২৮০ টাকায় পৌঁছেছে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, সরবরাহ বেশ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে।
সবজির মধ্যে টমেটোর দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে ১২০ থেকে ১০০ টাকায় পৌঁছেছে। লাউয়ের পিস এখন ৫০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা এবং বাঁধাকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রায়সাহেব বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, এসব সবজির দাম গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা করে কমে গেছে।
বাজারে এসে দেখা যায়, শীতের মরসুমে ঢাকায় ক্রেতাদের উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, কারণ আবহাওয়া বেশ শীতল। তবে বিক্রেতারা আশাবাদী, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের সংখ্যা আবার বেড়ে যাবে। শীতকালীন সবজি সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে যাওয়ায় বেশিরভাগ ক্রেতাই স্বস্তি অনুভব করছেন। ফলে তারা প্রয়োজন অনুযায়ী সবজি কিনতে পারছেন।
রায়সাহেব বাজারের বেশ কিছু ক্রেতা বলছেন, গত বছর তুলনায় প্রায় পুরো সময়ই সবজির দাম বেশি ছিল। এখন অনেক ধরনের সবজি ৩০-৪০ টাকায় কেনা যায়, যা আগের চেয়ে অনেক সস্তা। ১০০ টাকা দিলে দু-চার দিনের জন্য যথেষ্ট সবজি কেনা সম্ভব।
শীতের সবজির মধ্যে শিমের দাম notably কমে গেছে। নতুন বিচিওয়ালা শিম এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অন্য শিমের দাম ৩০-৪০ টাকার মধ্যেই।
প্রায় দু-তিন সপ্তাহ আগের তুলনায় আলুর দাম কমে এসেছে। যেখানে আগে এটি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ২০-২৫ টাকায় নেমে এসেছে। একইভাবে, মূলার কেজি এখন ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ টাকা করে কমে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় পৌঁছেছে।
পাকা টমেটোর দাম তেমন পরিবর্তন না ঘটলেও এখনও তা ক্রেতাদের নাগালের বাইরে রয়েছে। প্রতি কেজি এখন ৬০-৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আবার, শাকের দামও কমে গেছে। পালং শাক, লাল শাক ও মুলা শাকের আঁটি এখন ১০-১৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
রায়সাহেব বাজারের নিয়মিত ক্রেতা কাদের বলেন, কিছু দিন ধরে দাম কিছুটা কমে গেছে। আজ আমি প্রয়োজনীয় সব কিছুই প্রায় ১০০০ টাকায় কিনে ফেলেছি, যা অন্যান্য সময় ১২০০-১৩০০ টাকায় হয়ে যায়। তবে তিনি আরো মনে করেন, আরও দাম কমানো উচিত।
অন্য এক ক্রেতা সজীব বলেন, বাজারে দর কতটা ওঠাবসা করছে, তা বোঝা কঠিন। কিছু পণ্যের দাম কমলেও পুরো বাজারে স্বস্তি ফিরতে এখনও সময় লাগবে। তিনি জানান, সরকার আরও কার্যকরভাবে বাজার মনিটরিং করলে সমস্ত পণ্যের দাম কমানো সম্ভব।
বাজারের বেশিরভাগ জিনিসের দাম কিছুটা কমলেও, নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিপণ্যের দাম এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন লিটারপ্রতি ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৯০ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৪৫০-১৫৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, চিনি ১১0 টাকা, খোলা চিনি ৯৫ টাকা। দুই কেজির প্যাকেট ময়দা ১৩০ টাকা, আটা দুই কেজির ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
অতিরিক্তভাবে, এলাচি ৪৫০০, দারুচিনি ৫০০, লবঙ্গ ১২৮০, সাদা গোল মরিচ ১৩৫০ ও কালো গোল মরিচ ১১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে, প্যাকেটপ্রতি ১৫৫ টাকায় পোলাও চাল বিক্রি হলেও, খোলা পোলাও চালের মূল্য ৯০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। ছোট মসুর ডাল ১৫৫ টাকা, বড় মসুর ডাল ৯০ টাকা, বড় মুগ ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১0 টাকা ও মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের জন্য কাঁচাবাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় অনেক পণ্যই নাগালে এসেছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ ও নতুন আলুর দাম কমে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো কিছুটা খরচে স্বস্তি পেয়েছেন। তবে ক্রেতাদের অভিমত হলো, কেবল কয়েকটি পণ্যের দামে সামান্য পতনেই বাজারে পূর্ণ স্বস্তি আসবে না। তারা মনে করেন, বাজারে মনিটরিং জোরদার করে চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য কিছুর দাম কমালে সাধারণ মানুষের জন্য Sudoku সককে তাও আরও সুবিধাজনক হবে।






