জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের espírito বা উদ্দীপনাকে কৌশলে জামায়াতে ইসলামীর কাছে হস্তান্তর করার গুরুতর অভিযোগ তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে নিজের পদত্যাগ ঘোষণা করেছেন দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীন। আজ রোববার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিস্তারিত ও আবেগে ভরা পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্তও জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাস ভঙ্গ’ এবং ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে বিষয়টিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনায় আনা করেছেন।
তাজনূভা জাবীন দাবি করেন, এনসিপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর এই জোট কোনও একক বা অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং এটি এক meticulously পরিকল্পিত চক্রের অংশ। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি সাড়ম্বরে ১২৫ প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও শেষ মুহূর্তে মাত্র ৩০ আসনের বিনিময়ে জোটের সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসানো হয়েছে। এর ফলে বাকিরা নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছেন না, যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর প্রস্তুতিও নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যেখানে চরমোনাই পীরের দল জামায়াতের কাছ থেকে ৭০টি আসন পেতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে জুলাইয়ের আন্দোলন থেকে জন্ম নেওয়া দলটি কেন মাত্র ৩০টি আসনের জন্য সীমাবদ্ধ থাকল? জাবীনের মতে, জুলাইয়ের ভবিষ্যৎবান্ধব রাজনীতি বদলে পুরো আন্দোলনটাকেই জামায়াতের হাতে জিম্মি করে দেওয়া হয়েছে।
দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও নেতৃত্বের উপর তীব্র সমালোচনা করে এই নেত্রী বলেন, এনসিপির শীর্ষ নেতারা এখন নিজেদের মধ্যে ‘মাইনাসের রাজনীতি’ করার চেষ্টায় ব্যস্ত, যার ফলে দেশের জন্য নতুন কোনও প্রকৃত ‘বাংলাদেশপন্থি’ রাজনীতি করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, যারা আদৌ এনসিপির মধ্যপন্থা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মূল আদর্শ ধারণ করতে চেয়েছিলেন, তাদের ‘আবেগী’ হিসেবে আলাদা করে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল বা ক্ষমতাবিহীন করে রাখা হয়েছে। জাবীন বলেন, এনসিপি এখন আর সেই বিপ্লবী সংগঠন নয়, বরং এটি জুলাইয়ের স্পিরিটকে কেবল ক্ষমতা দখলের জন্য ব্যবহার করছে। তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, বলেন, মিলিয়ন অগণিত অনুসারীযুক্ত ‘গণঅভ্যুত্থানের নেতা’রা বিভিন্ন সময় দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙলেও তাঁদের কোনো জবাবদিহিতা নেই, কিন্তু সাধারণ সদস্যরা যদি পদত্যাগ করেন, তাকেই অপরাধ হিসেবে দেখা হয়।
ব্যক্তিগত দুঃখ প্রকাশ করে তাজনূভা জাবীন এও জানিয়েছেন, তাঁর মা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন, কিন্তু আজ এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়েছে। তবে রাজনৈতিক সততার পরিচয় দিতে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর নির্বাচনী তহবিলে জনগণের দেওয়া প্রতিটি টাকা এক এক করে ফেরত দেবেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট এড়ানো মানেই বিএনপির সমর্থক হওয়া নয়; বরং তিনি চান, এনসিপি নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে একটি স্বাধীন, তৃতীয় শক্তি হিসেবে থাকুক। দল ছাড়লেও, JULY-এর স্বপ্ন এবং দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন এই তরুণ চিকিৎসক ও নেত্রী। তাঁর এই পদত্যাগের সংবাদ রাজনৈতিক অঙ্গনে এনসিপির অভ্যন্তরীণ সংকট ও আদর্শিক বিভক্তির আলাদা রূপ তুলে ধরেছে, যা প্রাকৃতিকভাবেই অনেকটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে দলের ভেতর চলমান বিভাজন।






