আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলের পতিত জমিতে এই বছর ব্যাপকভাবে মিষ্টি কুমড়া চাষ হয়েছে। বিভিন্ন কৃষক তাদের ক্ষেতে খুবই কম খরচে দারুণ ফলন পাচ্ছেন এবং ফলনের সুফল লাভ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। একজন কৃষক ১৫ বিঘা জমিতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ৮ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন, যা তাদের জন্য অনেকটা স্বপ্নের মতো সফলতা বলে মনে হচ্ছে। বাজারে তুলনামূলক ভালো দাম থাকায় তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই এলাকায় প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছিল। এবার সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ১০৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। উত্তোলনের কাজ এই মুহূর্তে দ্রুত চলমান, যেখানে প্রতি হেক্টরে ২০ থেকে ২২ টন কুমড়া সংগ্রহ হচ্ছে।
দর্শকরা দেখতে পান, এই অঞ্চলের আধা-চরাঞ্চলে যমুনা ও বাঙালি নদী প্রবাহিত। ফলে এখানকার বিশাল এলাকা চর হিসেবে পরিচিত। এই পতিত জমিগুলো বহু বছর ধরে অবহেলিত থাকলেও বর্তমানে কৃষকেরা পানিসেচের মাধ্যমে এই জমিগুলোতে চাষ শুরু করেছেন। বিশেষ করে মিষ্টি কুমড়া হচ্ছে এমন একটি ফসল যা পতিত জমিতে সহজে লাগানো যায় এবং দেড় থেকে তিন মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়।
এ বছরও একইভাবে কৃষকেরা চরাঞ্চলের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ব্যাপক হয়েছে। এখন তারা জমি থেকে কুমড়া উত্তোলন শুরু করেছেন। বাজারে বিক্রি হচ্ছে, প্রতি কেজি দরে ২০ টাকা। ফলে কৃষকেরা লাভের মুখ দেখছেন।
পাইকারি ক্রেতারা জমি অনুযায়ী চুক্তি করে মিষ্টি কুমড়া কিনে নিচ্ছেন, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুর ও ঢাকায় সরবরাহ হচ্ছে।
কাছে থাকা কাজলা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া চরের কৃষক রঞ্জু মিয়া এই বছর ১৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। এতে তার মোট খরচ হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার ফল পুলিশে দেখা গেছে, তার কুমড়ার মূল্য এখন ৮ লাখ টাকার মতো, যা প্রথম কিস্তির বিক্রি। তিনি ঘোষণা করেছেন, তিনি দ্বিতীয় কিস্তির জন্যও প্রস্তুত।
আরেক কৃষক শাইন মিয়া ৩ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন, যেখানে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা, আর বিক্রির মূল্য দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। একই এলাকার জিয়াউল ফকিরও ৩ বিঘা জমিতে চাষ করে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।
রঞ্জু মিয়া বলছেন, আগে চরাঞ্চলের পতিত জমিগুলো শুধু অবহেলিত থাকত। কিন্তু এখন কৃষকেরা পানিসেচের মাধ্যমে এই জমিগুলোতে হঠাৎ করে লাভজনক চাষ করে থাকেন। গত বছর ফলন কম থাকার কারণে কিছুটা ক্ষতিও হয়েছিল, কিন্তু এই বছর ফলন খুব ভালো হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে জমিতে থেকে কুমড়া উত্তোলন শুরু করেছেন, এবং বাজারে বিক্রির জন্য বেশ লাভের মুখ দেখছেন। তার ১৫ বিঘা জমির কুমড়ার বিক্রির মূল্য সাড়ে ৮ লাখের মতো।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকেরা চরাঞ্চলের পতিত জমিগুলোতে এই চাষ শুরু করেন এবং এতে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে এই বছর মিষ্টি কুমড়ার ফলন ব্যাপক হয়েছে এবং বাজারে দামও ভালো থাকায় কৃষকেরা খুবই আনন্দিত।






