ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ও গভীর মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে রোববার মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি এক রক্তক্ষয়ী সংঘাতে বিভক্ত, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। এর ফলে দেশের স্থিতিশীলতা চরমভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে, নিসন্দেহে প্রভাবশালী নেত্রী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশের পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সামরিক জান্তা ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান লড়াইয়ে দেশটি ব্যাপক ধ্বংসের সাক্ষী হয়ে উঠেছে। এই সংঘাতের পাশাপাশি, চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রবল ভূমিকম্প এবং একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের মোট ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ২ কোটি মানুষ এখন জরুরি মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন। মহামূল্যাবিস্তার ও মুদ্রার মানের ব্যাপক পতনের কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ের সংঘাতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার ৮০০ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন, এবং তিন শ লাখের বেশি মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আগামী বছর মিয়ানমারে শত কোটির বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে পড়বে, যার মধ্যে ১০ লাখ মানুষ জীবিকা রক্ষার জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন হবে। রॉयটার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, দেশের খাদ্য সংকট ও ক্ষুধার তথ্য গোপন করতে জান্তা সরকার গবেষক ও ত্রাণকর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। একই zamanda, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, প্রয়োজনীয় ত্রাণের মাত্র ১২ শতাংশ তহবিল সংগ্রহ হয়েছে, যা মিয়ানমাকে বিশ্বের অন্যতম ‘আন্ডার-ফান্ডেড’ পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছে শিশুরা। ডব্লিউএফপি’র তথ্য বলছে, এ বছর পাঁচ লাখ ৪০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া, পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতিটি তিন শিশuschার মধ্যে একজনের শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। একসময় এ অঞ্চলের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল মিয়ানমার, কিন্তু বর্তমানে সেটি ধুঁকছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আবার ৩ শতাংশে ফিরে আসবে দাবি করা হলেও, মূল্যস্ফীতি এখনও ২০ শতাংশের উপরে। অন্যদিকে, বিদ্যুতের সংকটের কারণে দেশ এখন সৌরশক্তির দিকে ঝুঁকছে। এই পরিস্থিতির সুবিধা নিতে, জান্তা সরকার রাশিয়ার সঙ্গে একটি বড় বিনিয়োগ চুক্তি করেছে, যা দেশের জ্বালানি খাতকে নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।






