লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রমের সম্মানজনক নামটি এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদান করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির মাঠে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
অলি আহমেদ এই সিদ্ধান্তের পেছনে ক্ষমতার মোহকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। তার মতে, তার জীবন শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির সঙ্গে আপসহীন লড়াই চালিয়েছেন। কিন্তু আজ তিনি সেই শক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নিজস্ব আদর্শ ও বিবেকের সাথে আপোস করে ফেলেছেন। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি সম্প্রতি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার এতবারপুরে এক নির্বাচনী গণসংযোগের সময় এই মন্তব্য করেন।
প্রকাশ করেছেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু আজ তার কাছে মনে হয়েছে, ক্ষমতার মোহে তিনি তার জনতার স্বপ্ন ও আদর্শকে বিসর্জন দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, এই জোটে যোগ দিয়ে তিনি নিজের মর্যাদা ও বীরত্বকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন।
অলি আহমেদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার চারপাশের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রকাশ পাওয়া গেছে। জাতীয়তাবাদী দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা এই জোটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। চান্দিনার শুধু নয়, পুরো জাতির অনেকেরই এই সিদ্ধান্তের প্রতি তীব্র আপত্তি।
অপরদিকে, সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ, যিনি বর্তমানে বিএনপির একজন মূল নেতা, তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে যুদ্ধ করা একজন ব্যক্তির জন্য এটি খুবই দুঃখজনক যে তিনি এখন দেশের মতের বিপরীতে অবস্থান নিলেন। অলির এই সিদ্ধান্তের জন্য তিনি হতবাক ও দুঃখিত, এবং এটি তার জননেতৃত্ব ও রাজনীতির স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
রেদোয়ান আহমেদ আরও যোগ করেন, অলি আহমেদকে তিনি সর্বদা এককভাবে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তিনি জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন, যা দেশ ও জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক পদক্ষেপ।
গত ২৮ ডিসেম্বর তিনি গণমাধ্যমে ঘোষণা দেন, তিনি এলডিপির নেতৃত্বে জামায়াত-নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটে যোগ দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এর মাধ্যমে অলি আহমেদ তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের স্বার্থের সাথে আপস করেছেন।
প্রসঙ্গে, চান্দিনায় গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা সবাই একযোগে এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন এবং আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ের জন্য একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তাদের মতে, এ রকম সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাননি, বরং দেশের উন্নতি ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন নিয়েও আরেকবার ভাবনা ভাবার প্রয়োজন।






