আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে সীমান্ত থেকে অস্ত্রের প্রবেশের বিষয়টি উদ্বেগজনকভাবে বেড়েейств করেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা কেন্দ্রিক কয়েকটি পলাতক রাজনৈতিক নেতা ও সন্ত্রাসী এই অস্ত্র পাচার চক্রের মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন সীমান্তে সক্রিয় রয়েছে শক্তিশালী অপরাধ সিন্ডিকেট, যা দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্র।
খবর অনুযায়ী, এসব অস্ত্র প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় মজুত করা হয়। পরে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য তারা অবৈধ উপায়ে ট্রান্সপোর্ট করে। পাচারকারীরা বিশেষ করে সবজি বা ফলের চালানের মধ্য দিয়ে অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করছে, যেখানে বহনকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই কিশোর ও যুবক। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই চক্রের সঙ্গে রাজশাহী অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও জড়িত ছিল। অতীতে মামলা ও তদন্তের মুখে তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন। এখন তারা বাংলাদেশে থাকা অনুসারী ও সহযোগীদের মাধ্যমে এই নাশকতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, পূর্ববর্তী সরকারের সময় স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা এই চক্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। কেউ দেশে ফিরে এসেছেন, কেউ বিদেশ থেকে নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছেন, আবার কেউ কারাভোগের পরও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
গত কিছুদিনে সীমান্তে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে নিরাপত্তা বাহিনী বড় ধরনের অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের সীমান্তে বিজিবি অভিযান চালিয়ে ওয়াকিটকি সেট ও অস্ত্র উদ্ধার করে। হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (৫৫ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানজিলুর রহমান জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
অপরদিকে, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ভারত থেকে ডেকে আনা একটি ভারতীয় পিস্তল, গুলি ও দেশীয় অস্ত্র সহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ির বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহা. শাহীনূল ইসলাম জানান, গোয়েন্দা ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এছাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত থেকে গত মঙ্গলবারও বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করা হয়। একাধিক অভিযানে বিদেশি ও দেশি অস্ত্রের বড় চালান আটক হয়েছে, যা বাইরে থেকে আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজশাহী ও নওগাঁসহ অন্যান্য অঞ্চলেও একাধিক অভিযান চালিয়ে বিদেশি ও দেশি অস্ত্রের বড় চালান জব্দ ও আনুসাঙ্গিকদের আটক করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও অপরাধ চক্রের সক্রিয়তা অনেক বেশি কারণ তারা বিভিন্ন সুবিধা অর্জন করে আগের মতোই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে আসন্ন নির্বাচনী পরিবেশ অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ অস্ত্রের এই মজুত ও সরবরাহ প্রত্যেক নাগরিকের জন্য হুমকি কারণ এটি সোচ্চারভাবে দেশে অপ্রতুল শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, এই অস্ত্রের মজুতের সঙ্গে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের ক্ষমতাধর ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকাও আশঙ্কাজনক ও চিন্তার বিষয়। ফলে, প্রশাসন ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দ্রুত ও সংহত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিজিবি রাজশাহী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ যেকোনো অবৈধ সামগ্রী দেশের ভেতরে প্রবেশ রোধে আমাদের নজরদারি অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে, র্যাব-৫ জানায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহিংসতা ঠেকাতে অস্ত্রের জোয়ারের তথ্য রয়েছে, তাই তারা সতর্ক রয়েছে।






