কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও চামটাঘাট সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রায় ৫০০ জমির মালিকের থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। বিভিন্ন বসতভিটা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে নেওয়া হলেও এখনও তাদের প্রাপ্য ১২৩ কোটি টাকার কোনও খোঁজ নেই। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সড়ক নির্মাণের জন্য ক্ষতিপূরণের টাকা দ্রুত পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন করে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা। মানববন্ধনের পর তারা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি তুলে দেন। এই মানববন্ধনে অংশ নেন করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রেনু মিয়া, ক্ষতিগ্রস্ত কবির উদ্দিন ভূইয়া, চামটাঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু, মো. নাজমুল Mিয়া, মো. জুয়েল Mিয়া, হেলিম Mিয়াসহ আরো অনেকে। শত শত ক্ষতিগ্রস্ত অংশগ্রহণ করেন। মো. রেনু মিয়া বলেন, ‘আমার ছয় শতাংশ জমি ও একটি ২০০ ফুটের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় বছর ধরে সবকিছু ফেলে রেখেছি, কিন্তু এখনও এক টাকাও পাইনি। রাস্তা ক্লিয়ার করে দিয়ে বলছেন, টাকা দেওয়া হবে না।’ চামটাঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, ‘প্রায় ১৫ শতাংশ জমি আমাদের গেছে, আমরা টাকা পাওয়ার আশায় সবকিছু ভেঙে দিয়েছি। কিন্তু এখনও দুর্ভাগ্যবশত ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। এর জন্য দ্রুত টাকা পরিশোধের দাবি জানাচ্ছি।’ অন্য এক ক্ষতিগ্রস্ত কবির উদ্দিন ভূইয়া যোগ করেন, ‘আমরা বাসা-বাড়ি ও জমি বিক্রি করে রাস্তা নির্মাণে সহায়তা করেছি। কিন্তু এখনো আমাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া হয়নি। দ্রুত টাকা পরিশোধের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি চাচ্ছি।’ জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালে শুরু হয়। কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। এর আগে ২০১৯ সালে সাকুয়া বাজার থেকে চামটাঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন মৌজার জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে এলএ কেস নম্বর ০৯/২০১৯-২০২০ এর আওতাধীন এই অধিগ্রহণ কার্যক্রম এখনো সম্পন্ন হয়নি। ৭ ধারা নোটিশ পর্যন্ত এসে আটকে গেছে এই প্রক্রিয়া, ফলে জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় অনিশ্চয়তার মাঝে দিন কাটাচ্ছেন। এর ফলে চামটাঘাট বন্দর এলাকার ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকান ঘর সংস্কার বা মেরামত করতে পারছেন না। এই সড়ক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কেন্দ্র ও বেশ কয়েকটি জেলার যোগাযোগের মূল মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কখনো কখনো রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ হলেও অনেক স্থানে খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা অবস্থা দেখা যায়, যার ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান জানান, ‘অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসারে কাজ চলছে। প্রাক্কলন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অর্থ ছাড় হয়নি। অর্থ পেলে দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হবে।’ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘এই প্রকল্পের পাঁচটি এলএ মামলার মধ্যে চারটিতে ক্ষতিপূরণ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। বাকি একটি মামলার প্রাক্কলিত মূল্য ১২৩ কোটি টাকা। বর্তমানে ডিপিপিতে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে, অতিরিক্ত ৬৩ কোটি টাকার প্রয়োজন। সংশোধিত ডিপিপি পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে, অনুমোদন ও অর্থশেয় পাওয়া গেলে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হবে।’






