মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ জাল ও চাই (ফাঁদ) ব্যবহার করে ব্যাপক পরিমাণে পাঙ্গাসের পোনা নির্বিচারে শিকার করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে মাছের প্রজননে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী জড়িত থাকলেও মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের অবহেলা বা নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। মাঝে মাঝে চালানো অভিযান গুলির পরও আবেগের এই মহোৎসব বন্ধের কোন দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হয়নি, কারণ অসাধু জেলেরা প্রভাবশালী মহলে হাত গতিয়ে আবার জাল ও চাই ফেলছে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোলার বিভিন্ন পয়েন্ট—বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, মনপুরাসহ—নদীতে নিষিদ্ধ জাল ও চাই ব্যবহার করে লক্ষ_PLACE_Paano> পোনা শিকার এবং তা আড়তের মাধ্যমে বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। অসাধু আড়তদাররা দিন দিন লাখ লাখ পোনা জেলেদের থেকে কিনে নোটবন্দি করছে, যা মাছের ভবিষ্যৎ প্রজনন ও উৎপাদনের জন্য এক গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের মির্জকালু ও হাকিমুদ্দিন মাছঘাটে অবস্থিত দৃশ্য। জানা যায়, ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে যেখানে ইলিশের আকাল থাকার কথা, ওই সময়েও ক্ষুদ্র আকারের পাঙ্গাসের পোনা নিষিদ্ধ চাই ও জাল দিয়ে প্রতিদিন লাখো পোনা শিকার হয়। এসব পোনা আবার আড়তদারদের কাছে বিক্রি হয়, যেখানে থেকে খুচরা বিক্রেতারা গ্রাম ও শহরের বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। ফলে পোনা নিধনের এই অব্যাহত প্রবণতা মাছের প্রজনন ব্যাহত করে, যা জেলেদের জীবিকা ও দেশের মাছের সম্পদ জন্য মারাত্মক হুমকি।
সাধারণত, মৎস্য আইনের মতে, ১২ ইঞ্চি (৩০ সেন্টিমিটার) নিচে পাঙ্গাস শিকার সম্পূর্ণ অযোগ্য। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ভোলার উপকূলে এই পোনা প্রজননের মৌসুমে উপকারী হয়। তবে, কালাম মাঝি নামে একজন জেলে জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ বিষয়ে জড়িত থাকায় সাধারণ জেলেরা প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। নদী থেকে অবৈধ চাই ও জাল ধ্বংস না হলে ভবিষ্যতে বড় পাঙ্গাস পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে, এবং বাজারে তা থাকায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
মাধ্যমকর্মী রিয়াজ ফরাজী বলেন, মেঘনায় নিষিদ্ধভাবে পোনা নিধনের এই উৎসব চললেও, প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগে নেই কার্যকর ব্যবস্থা। প্রভাবশালী চক্রের দাপটে এই অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ হচ্ছে না, যা সম্পদকে বিপন্ন করে তুলছে। পোনা নিধনের ফল হিসেবে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে, বড় মাছের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, যা জেলেদের জীবিকা ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
অভিযোগ উঠেছে, মৎস্য বিভাগ অনেক সময় ধরেন, কিছু চাই ও জাল জব্দ করেন, তবে তা যথেষ্ট নয়। সঠিক তদন্ত ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা না থাকায় এই অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে মৎস্য বিভাগ দাবি করেছে, তারা পাঙ্গাসের পোনা রক্ষায় বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছে। নভেম্বরে এক জেলেকে পোনা শিকারে দণ্ড দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি ডিসেম্বরের শেষ দিকে তজুমদ্দিন উপজেলায় কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগের যৌথ অভিযান চালিয়ে অবৈধ চাই, জাল, ও পোনা সহ ১৩ জেলেকে আটক করে।
উপকূলীয় সচেতন মহলের মতে, মাঝেমধ্যে কিছু চাই ও জাল জব্দ ও ধ্বংস করে, নদীতে অবমুক্ত করে বা ঘৃণ্যভাবে কিছু পোনা উদ্ধার করে এই মহোৎসব বন্ধ হবে না। প্রয়োজন সঠিক নজরদারি, জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের। এর মাধ্যমে মেঘনার বুক থেকে এই অবৈধ পোনা নিধনের চক্র রুখে দিতে পারা সম্ভব। এই জন্য দুর্বলতা ও অবহেলার পরিবর্তে, সক্রিয় নজরদারির মাধ্যমে নিরীহ মাছের সম্পদ সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।






