২০২৫ সালটি ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য এক অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ বছর, যেখানে অনেক কিংবদন্তি ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের বিদায়ঘণ্টা টেকে গেছে। এই বছরে ক্রিকেট বিশ্ব বিগত যুগের মহান ক্রিকেটারদের হারিয়েছে, যারা নিজেদের ক্যারিয়ারে ক্লান্তি বা নতুন দিগন্তের সন্ধানে মাঠ থেকে বিদায় নিলেন। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারতের, অস্ট্রেলিয়ার ও নিউজিল্যান্ডের বেশ কয়েকজন সম্মানিত খেলোয়াড় তাদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অবসান ঘটিয়েছেন, যা ভক্তদের মধ্যে এক ধরনের বিষাদ ও শূন্যতার সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই বছর ছিল বড় ধরনের পরিবর্তন ও রূপান্তরের সময়। বছরের শুরুর দিকে, ১০ জানুয়ারি, দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল তার দীর্ঘ ও গৌরবময় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন, যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে এক মাইলফলক। কিছু মাস পরে, মার্চে, অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমও ১৯ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষ নিশানা স্পর্শ করেন। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়ার পর, এই বছরই অবসরের ঘোষণা দেন মহাকালের মতো একজন ক্রিকেটার, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, যিনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকেও বিদায় নেন। এর সঙ্গে আরও একজন প্রবীণ ক্রিকেটার, শামসুর রহমান, আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘ অনুকরণীয় ক্যারিয়ার শেষ করেন।
ভারতীয় ক্রিকেটেও এই বছর ছিল ব্যস্ত এবং রঙীন। মে মাসে ইংল্যান্ড সফরের আগ মুহূর্তে, আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম ব্যক্তিত্ব বিরাট কোহলি টেস্ট ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেন। তিনি ১২৩ টেস্টে ৯ হাজার ২৩০ রান সহ ৩০টি সেঞ্চুরি করেছেন। এরপর, কিছুদিনের মধ্যে সফল অধিনায়ক ও ওপেনার রোহিত শর্মাও টেস্ট থেকে অবসর নেন, যা ছিল কিছুটা বিতর্কিত। এছাড়া, আইপিএলে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স না পাওয়ায় ও নানা চোটের কারণে কিংবদন্তি অফ-স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক বিদায় জানিয়ে দেন। চেতেশ্বর পূজারা, ঋদ্ধিিমান সাহা, অমিত মিশ্র, মোহিত শর্মা ও বরুণ আیرন – সবাই তাঁদের দীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময় ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনে ফেলেন।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটার স্টিভ স্মিথও ৩৫ বছর বয়সে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। দু’বারের বিশ্বকাপজয়ী এই প্রাক্তন ক্রিকেটার তার এক দিনের ক্যারিয়ারে বিভিন্ন অর্জন ও স্মৃতি রেখে যান। নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল যেমন ২০১৫ বিশ্বকাপে রেকর্ড গড়েছিলেন, তিনি এখন সব ধরণের ক্রিকেট থেকে বিদায় জানিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে তার ১০০তম টেস্ট খেলার পর সব ফরম্যাটে অবসরে যান, এবং আফগানিস্তানের শাপুর জাদরানও আন্তর্জাতিকভাবে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন। এই প্রখ্যাত ক্রিকেটারদের বিদায় ক্রিকেট বিশ্বের জন্য বড় এক শূন্যতা তৈরি করলেও, একই সঙ্গে এটি তরুণদের জন্য নতুন সাহস, নতুন সুযোগ ও প্রমাণের পথ উন্মোচন করেছে। প্রত্যেকেরই বিদায় ছিল তার স্বরলিপি, ভেজাল মুহূর্ত ও অনুপ্রেরণার গল্পের সাথে গাঁথা, যা আধুনিক ক্রিকেটের ইতিহাসে অম্লান থাকবে।






