ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। আজ সোমবার, তিনি ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন বলে জানা গেছে। এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, নেতানিয়াহু রোববারই যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান এবং তার একদিন পরে ট্যাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে কোথায় বৈঠক হবে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
নেতানিয়াহুর এই সফর তখনই হচ্ছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন এবং অঞ্চলটির মধ্যস্থতাকারীরা গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শান্তির জন্য দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর এ সাক্ষাৎকারে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হবে, যেখানে নেতানিয়াহু আরও কঠোর পদক্ষেপের আভাস দিচ্ছেন।
এটি এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন মিত্ররাও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর দম্ভে রয়েছেন। দাবি করা হচ্ছে, তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্রের মোকাবেলায় এখনই উপযুক্ত সময়—যদিও বিশ্লেষকরা জানান, ইরানের সঙ্গে নতুন করে সংঘর্ষের সম্ভাবনা ট্রাম্পের চালু নীতিগুলোর সঙ্গে সাংঘার্ষিক।
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির সিনিয়র ফেলো সিনা তুসি বলেন, ট্রাম্প যেখানে ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে চাচ্ছেন, সেখানে নেতানিয়াহু অন্যভাবে অঞ্চলটিতে সামরিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। তিনি মন্তব্য করেন, “ইরানকে ভেঙে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী আগ্রহ ও অবিরাম যুদ্ধ চালানোর পরিকল্পনাই ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নেতানিয়াহুর এই উভয় ইচ্ছে—আন্তর্জাতীয় স্থিতিশীলতা ও ইরানের শক্তিশালী মোকাবেলা—প্রমাণ করে তাঁর মূল লক্ষ্য হলো অপ্রতিদ্বন্দ্বী আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। এছাড়া, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চাপ দিচ্ছেন এই অঞ্চলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ আলাদা হয়ে গেছে, তারা সরাসরি সেনা পাঠানোর চেয়ে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চাইছে। ফলে, শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বা সামরিক সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার পর নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরলেও, বাস্তবে দেখা যায় ইসরায়েল বারংবার চুক্তি লঙ্ঘন করছে। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে প্রথমবারের মতো শান্তি আনতে সক্ষম হয়েছেন। তবে, ইউএস এর নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল বলছে—ইউরোপ, এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের মতো মধ্যপ্রাচ্যও এখন সহযোগিতা, বন্ধুত্ব ও বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসছে। এ কারণে, যুক্তরাষ্ট্রের মতামতে এই অঞ্চলটি নিরাপত্তার জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এবং তারা নিজেদের সামরিক উপস্থিতি কমাতে চাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, ইসরায়েল একের পর এক যুদ্ধের জন্য চাপ দিচ্ছে, যা আবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সংঘাতে টেনে আনতে পারে। আবার, মার্কিন মিত্ররা ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর আঞ্চলিক ব্যবস্থার দাবি জোর দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের নীতির অগ্রাধিকারের সঙ্গে এই সংঘাতের সম্ভাবনা সাংঘর্ষিক।
সুতরাং, এখন দেখার বিষয়—নেতানিয়াহু কি সত্যিই মার্কিন নেতৃত্বকে এই পরিকল্পনায় পা দেওয়ার জন্য চাপ দেবেন কি না। তিনি যেমন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশ্ব ও নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হিসেবে তুলে ধরছেন, তেমনি ট্রাম্প বলেছেন, গত জুনে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা মার্কিন হামলার মাধ্যমে তার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন, যা ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।






