করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সম্ভাব্য ধাক্কা সামাল দিতে সরকার আরো একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও এর আকার ও অন্যান্য নিয়মকানুন চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লাগছে। এদিকে প্রণোদনা প্যাকেজ বণ্টনের সঠিক কাঠামো নিশ্চিত করার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, কাঠামো ঠিক না হলে সব পর্যায়ে প্রণোদনা পৌঁছাবে না। আর তাতে প্রণোদনা প্যাকেজের সুফলও পাওয়া যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে সব শ্রেণির মানুষকে প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তা না হলে অর্থনীতিতে ভারসাম্য থাকবে না। এজন্য উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী শ্রেণির পাশাপাশি সাধারণ জনগণ যেমন, ক্রেতা-ভোক্তা, পেশাজীবীদের এ প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
প্রণোদনা প্যাকেজ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, আমাদের দেশে শীত ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত করোনার প্রকোপ খুব বেশি বাড়েনি। তাই অবস্থা যদি আরো খারাপ না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার প্রণোদনা না দেওয়াই ভালো। এখন পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার সুবিধা পেয়েছে তারা হলো কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান। প্রণোদনার ক্ষেত্রে এটা কাম্য নয়। দ্বিতীয়বার যদি প্রণোদনা দেওয়া হয় তাহলে এমনভাবে মানদণ্ড ঠিক করতে হবে যাতে সত্যি সত্যি যারা ক্ষতিগ্রস্ত যারা চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসা নেই এমন মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভোক্তা পর্যায়কে এ প্যাকেজের আওতায় না নিলে আসল সুবিধা পাওয়া যাবে না।
ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব এখনো কাটেনি। শিল্পউদ্যোক্তারা প্রণোদনা প্যাকেজসহ অন্যভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কলকারখানা চালু রাখলেও ক্রেতাদের আয় ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমেছে। এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধে সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলেছেন, অতীতেও ক্ষেত্রেবিশেষে ঋণ পরিশোধে লম্বা সময় দেওয়া হয়েছিল। অনেক উদ্যোক্তাই এই সুবিধা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কিস্তি পরিশোধ করেছেন। কিস্তির আকারও তাতে ছোট ছিল। এবারে করোনা সবার ক্ষেত্রেই নেতিবাচক হয়েছে। ফলে, ঋণ পরিশোধে সময়সীমা বাড়িয়ে দিলে উদ্যোক্তা যেমন বাঁচবে, ব্যাংকও আটকা পড়বে না। ব্যাংকের বিনিয়োগের টাকা ফেরতে এটিই হতে পারে কার্যকর পদক্ষেপ। এমন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধের জন্য আগামী মার্চ পর্যন্ত সময় পাবেন বলে আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যদিও ঋণ শ্রেণিকরণের সময়সীমা আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তবে জুন পর্যন্ত সময় না পেলেও ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিকরণের সময়সীমা বাড়ানোর চিন্তা চলছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর বিষয়ে এফবিসিসিআই সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শিল্প-বাণিজ্যে করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রভাব ছিল মারাত্মক। সেটা এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধের সময় কত দিন পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন তাও নির্ভর করছে করোনার প্রভাবের ওপর। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো দরকার বলে আমাদের মনে হয়েছে।
জানা গেছে, করোনার দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজের আকার ১০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ একটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে ১ লাখ ২১ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব ঘাটতি ছিল নতুন প্যাকেজ বাস্তবায়নে যেন সেগুলো না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকেই প্রাধান্য দিয়ে, উত্পাদক-ভোক্তা সবার হাতে নগদ অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেভাবে এখানেও উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন তারা। আর সেটা করতে পারলেই প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে।