বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে নিজের পলায়ন ও দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে নানা উপায়ে দেশকে রাজনীতি শূন্য করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে বিদেশি ও দেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আবারও এক নতুন ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ চালু হয়েছে, যা ২০০৭-২০০৮ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধানে গঠিত মাইনাস-টু পরিকল্পনারই পুনরাবৃত্তি বলে মনে করছেন তিনি। আব্বাসের মতে, এই ফর্মুলার মাধ্যমে বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলের শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা, যাতে দেশের মূল রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নিজস্ব স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, খাগড়াছড়ির সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অশুভ পরিকল্পনা চরাচর করে দেশি-বিদেশি শক্তিরা দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আব্বাস বলেন, কিছুমাত্র রাজনৈতিক দল নানা অজুহাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত, যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বাড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয় না, তবে বড় ধরনের মূল্য দিতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আব্বাসের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতি ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের মতোই, তবে এবার ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগই নতুনভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন সেক্টর থেকে নানা ষড়যন্ত্রকারীর সাহায্যে কিছু প্রশাসনিক নেতাকর্মী যাঁরা আওয়ামীপন্থি, তারাই বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য সক্রিয়। আব্বাসের মতে, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ চালু করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্ন ছদ্মবেশে এসে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লিপ্ত। এর পেছনে মূল লক্ষ্য হল বিএনপিকে দুর্বল বা সরিয়ে দিয়ে দেশের রাজনীতি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনা। আব্বাস আরও বলেন, কিছু ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও আমলারাই আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ তারা মনে করে, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে গেলে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সফল হবে। তিনি অভিযোগ করেন, অনেকে বলছেন, বিএনপি এখনকার পথে এগোচ্ছে, যা একসময় আওয়ামী লীগ অনুসরণ করেছিল। এই নেতা জানান, ইসলামী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি নানা ইস্যু উত্থাপন করছে, যাতে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অতিক্রম করতে না পারে। একটি দল দাবি করে, তাদের দাবি মানা না হলে নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে না, যা একপ্রকার ফ্যাসিবাদী আচরণ বলে মন্তব্য করেন আব্বাস। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন, বলেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তির জন্য লড়াই করেছি, অন্যের হাতে দেশের মাটি তুলে দেওয়ার জন্য নয়।’ আব্বাসের মতে, বিদেশিদের সঙ্গে সেন্ট মার্টিন, সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে আলোচনা একই ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি জানান, আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হবে, কারণ বিএনপি জনপ্রিয়তা বজায় রাখায় কিছু মহল দলটির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণ বিএনপিকে ভালোবাসে এবং মিথ্যা প্রচারণা সফল হবে না। আব্বাস বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে আওয়ামী লীগকেও প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ নেতাদের সরানো জরুরি। তিনি জানিয়েছেন, বিএনপি প্রস্তুত ও ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। সম্ভাব্য জোটের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন তেফসিল ঘোষণার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তার ধারণা, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মনোভাবকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে, যা দেশের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তিনি প্রধানমন্ত্রী ইউনূসের ফেব্রুয়ারিতে ভোটের ঘোষণা নিয়ে আস্থা প্রকাশ করেন, বললেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে।’ তবে এখনও খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিবেন কি না, এ বিষয়ে তার নির্দিষ্ট কিছু বলার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আব্বাসের মতে, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তবে খালেদা জিয়ার ভূমিকা কি হবে, সময়ই সেটি নির্ধারণ করবে। তিনি আরও বলেন, ইসলামী দলগোঠনের জোট গঠনে বিএনপি কোনো উদ্বেগে নেই, কারণ দেশের সাধারণ মানুষ উন্মুক্ত ও ধর্মনিরপেক্ষ দলকেই পছন্দ করে। তিনি শেষে বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও মধ্যপন্থি মুসলিম দলগুলোই জনপ্রিয়, সেগুলোর বিপরীতে যেন কোনো বিভেদ সৃষ্টি না হয়, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।