জয়পুরহাটে ডিমের নষ্ট ও পরিত্যক্ত খোসা থেকে পাউডার তৈরি করে নানা স্বার্থকতা সৃষ্টি করেছেন এই উদ্যোক্তা। এই পাউডার ব্যবহৃত হচ্ছে মাছ, হাঁস-মুরগি ও গরুর খাদ্যের জন্য ক্যালসিয়াম সরবরাহে এবং জমির জৈব সার হিসেবে। জেলার বিভিন্ন পোল্ট্রি ও হ্যাচারি থেকে ডিমের খোসা সংগ্রহ করে তিনি এই পাউডার তৈরি করেন, যা এখন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে তার জীবন স্তর আরও উন্নত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলছে, পরিবেশের দায়িত্বশীলতা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বৃত্ত্বের পথে এগিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়রা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বেলতলী গ্রামের বাসিন্দা বেলাল মোল্লা দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে জেলার বিভিন্ন পোল্ট্রি হ্যাচারি থেকে পরিত্যক্ত ডিমের খোসা সংগ্রহ করে আসছিলেন। তিনি আগেই খোসাগুলোর বিক্রি করতেন বগুড়াসহ অন্যান্য অঞ্চলে। পরে জানতে পারেন, সেই খোসা দিয়ে আরো বেশি লাভজনক পাউডার তৈরি সম্ভব। এই ভাবনা থেকেই তিনি ২০২৪ সালে বানান নিজের কারখানা, যেখানে প্রতিদিন ডিমের খোসা পাউডার হিসেবে পরিণত হয়। বর্তমানে এই পাউডার দেশের বিভিন্ন অংশে বিক্রি হচ্ছে, যা কৃষকদের জৈব সার হিসেবে, গরু, মাছ ও হাঁস-মুরগির খাদ্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রতিদিন বাজারে ৫০ কেজি পাউডার বিক্রি হয় ৭৫০ টাকায়, খরচ বাদ দিয়ে মাসে লাভ হয় প্রায় ২০,০০০ টাকা। কারখানার কর্মী আব্দুল খালেক জানান, ডিমের খোসা পরিষ্কার করে মেশিনে দিয়ে পাউডার তৈরি করা হয়, যা এরপর বাজারে বিক্রি হয়। তিনি বলেন, এই কাজে অংশ নিয়ে তাঁদের জীবিকা চালানো সম্ভব হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, আগে ডিমের খোসা অব্যবহার্য মনে করতেন। এখন দেখছেন, এই খোসা থেকে তৈরি পাউডার মাছের খাবার ও জমির জন্য উপকারী। সহজে পরিবেশের ক্ষতি কমে যাচ্ছে ও বেকারত্ব কমে আসছে। একজন মাছচাষি মকবুল হোসেন বলেন, ডিমের খোসার পাউডার দিয়ে মাছের খাওয়ানোর পর মাছের বৃদ্ধি সাধারণের চেয়ে একটু বেশি হয়েছে।
জয়পুরহাটে কৃষি ও পশুপালন কর্মকর্তারা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তারা বলছেন, ডিমের খোসার মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যা গাছের জন্য খুবই উপকারী। যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এর মাত্রা নির্ধারণ করা যায়, তাহলে আরো কার্যকরভাবে এটি ব্যবহারে উৎসাহ বাড়বে।
জয়পুরহাটের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, এই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা ডিমের ক্ষতি কমাতে সক্ষম হচ্ছি। ডিমের খোসা থেকে তৈরি পাউডার মাছ, পশু ও কৃষি জমির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এতে করে পরিবেশের দূষণ কমছে এবং আমরা দরকারি খনিজ উপাদান আরও কম মূল্যেই পেতে পারছি, যা আমাদের দেশের খাদ্য ও কৃষি সক্ষমতাকে আরও সম্প্রসারিত করবে।