যশোরের কেশবপুরসহ ভবদহ অঞ্চলে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই মাছ চাষের নতুন এক পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মাছের ঘের মালিকরা এখন প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য নানা এলাকায় জলাবদ্ধ বিল থেকে পাটা শ্যাওলা সংগ্রহ করে তা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। এই পদ্ধতি মাছের সুস্থতা এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়ক হচ্ছে এবং একই সঙ্গে পরিবেশের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কেশবপুরে রয়েছে ৪ হাজার ৬৫৮টি, মনিরামপুরে ৪ হাজার ৮৮৯টি এবং অভয়নগরে ১ হাজার ২০৫টি মাছের ঘের। এইসব অঞ্চলের জলাবদ্ধ বিলগুলো থেকে স্থানীয় জেলেরা পাটা শ্যাওলা সংগ্রহ করে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে করে ব্যয় কমে এবং মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯০২ বিঘা জমিতে এইসব মাছের ঘের অবস্থিত, যেখানে মোট ১০ হাজার ৭৫২টি ঘের কাজ করছে।
সকাল থেকে বাড়ির পাশের জলাবদ্ধ বিলগুলোতে ঘের মালিকরা পাটা শ্যাওলার জন্য ব্যস্ত থাকেন। পাঁজিয়া জলাবদ্ধ বিল থেকে শ্যাওলা সংগ্রহের সময় বাগডাঙ্গা এলাকার মাছের ঘের ব্যবসায়ী পারেশ মন্ডল বলেন, মাছের রোগে রোগমুক্তি এবং দ্রুত বড় হওয়ার জন্য শ্যাওলা খুব সহায়ক। অন্যদিকে, গৌরীপুরের ঘের শ্রমিক তাজুল ইসলাম বলেন, এই পদ্ধতিতে শ্যাওলা সংগ্রহ ও ব্যবহারে মাছের স্বাস্থ্যে উন্নতি হয়।
অভয়নগরের ভবদহ এলাকার মাছের ঘের ব্যবসায়ী মোস্তাক হোসেন জানান, প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে পাটা শ্যাওলা মাছের জন্য খুবই কার্যকর। এ শ্যাওলা ব্যবহার করে মাছের রোগ বালাই কমে যায় এবং মাছ সুস্থ ও সতেজ থাকে। এছাড়া, বিলের প্রাকৃতিক পরিবেশে দেশি মাছের প্রজনন ও জীবনচক্র সুস্থিত থাকে।
কেশবপুরের মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, বিল থেকে শ্যাওলা সংগ্রহ করে তা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে মাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। এটা পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও অর্থনৈতিকভাবে ফায়দাদায়ক। এই পদ্ধতিতে স্থানীয় জেলেরা কর্মসংস্থান পাচ্ছে, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং মাছের বাজারের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করছে। শ্যাওলা, বিশেষ করে পাটা শ্যাওলা, অর্থাৎ মাছের খাবার হিসেবে অত্যন্ত পুষ্টিকর। এই পদ্ধতিতে ছত্রাক ও অন্যান্য প্রাকৃতিক খাদ্য যোগে মাছের রোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। সব ধরণের সাদা মাছের জন্য এই শ্যাওলা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রিয়।