কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার পানচাষীরা বর্তমানে মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এই অঞ্চলে সুস্বাদু ও বৃহৎ আকারের পান উৎপাদনের জন্য সবখানে পরিচিত হলেও, বাজারে পানির দাম খুবই কম থাকায় তাঁদের অসুবিধা আরও বেড়েছে। অত্যধিক খরচ এবং কম দামের কারণে অনেক চাষিই এখন পান চাষ থেকে মুখ ফিরাচ্ছেন, বরজ ভেঙে দিচ্ছেন বা অন্য কৃষি কাজে মনোযোগ দিচ্ছেন।
জানাগেছে, ভেড়ামারা এলাকার তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৬৪৫ হেক্টর জায়গায় পান চাষ হয়। প্রতি বছর এখানে সাত হাজার মেট্রিক টন পান উৎপাদিত হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে এই অঞ্চলটি পানচাষের জন্য পরিচিত।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, জুনিয়াদহ, ধরমপুর ও বাহাদুরপুর এই তিন ইউনিয়নে পানচাষিরা দুর্দশাগ্রস্ত। একটি নতুন বরজ তৈরি করতে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হয়, কিন্তু পান বিক্রি করে যান মাত্র এক লাখের কম। বরজের সরঞ্জামের দামও আগের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। বর্তমানে শ্রমিকের দরে যেমন বৃদ্ধি হয়েছে, তেমনি পান বরজের মেরামতের খরচও বেড়েছে। এ কারণে অনেক চাষি এখন পানের বরজের অবনমন বা ভাঙচুর করছেন। ঋণের বোঝা ছেড়ে অনেকেই অন্য চাষাবাদে ঝুঁকছেন, তবে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে পরিবার নিয়ে দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ।
পান বিক্রির বাজারে দেখা যায়, বেশিরভাগ পান ৫০ থেকে ২০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে খুব মানসম্পন্ন পান বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। সেখানে বিড়ার পান বিক্রি হয় ৫ থেকে ৩০ টাকায়।
এক চাষি মো. রফিক বলেন, ‘প্রতি বিড়ার পান বিক্রি করছি ৭ টাকায়, কিন্তু গত বছর এই দামে ৯০-১০০ টাকা বিক্রি করেছিলাম। এখন আর ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়।’ অন্য আরেক চাষি তুষার জানান, ‘আমার ৯০টি পান পিলি ছিল, কিন্তু দামের খুব অবনমন হওয়ায় একপর্যায়ে বরজ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বাঁধের এক প্রবীণ পানচাষি জমেলা খাতুন কাঁদছেন, ‘এই ৪০ বছরের পুরোনো পান বরজ টিকিয়ে রাখতে পারছি না। এখন টাকা না পেয়ে খরচের হিসাব মিলছে না।’ তার মতোই অন্য চাষিরাও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
জগশ্বর পানহাটের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন বলেন, উৎপাদন বেশি হলেও রপ্তানি কম থাকায় পানির বাজারে দাম আরও কমে গেছে। শ্রমিক ও সরঞ্জামের খরচ গত বছরের তুলনায় ২-৩ গুণ বেড়েছে, তবে দাম কম থাকায় চাষিরা খুবই বিপদে রয়েছেন। সরকারের কোনো প্রণোদনা না থাকায় পানচাষিরা হুমকির মুখে। তারা এই ক্ষতিগ্রস্ত খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা চাচ্ছেন।
ভেড়ামারার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশফাকুর রহমান জানান, পানচাষিদের দুর্দশার বিষয়টি তারা শুনেছেন এবং এই সমস্যা সমাধানে নানা উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা চলছে।