ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও দখলদার ইসরায়েল মধ্যে বৃহস্পতিবার ঘোষিত যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বাহিনী নতুন করে হামলা চালিয়েছে। এর ফলে অন্তত ১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। গাজার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরেও গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে নতুন করে ১৯ জনের প্রাণ গেছে। একই সঙ্গে ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৫৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে—তাদের অধিকাংশই ইসরায়েলি হামলায় নিহত। এসব লাশ গাজার বিভিন্ন অঞ্চলের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি আবাসিক এলাকায় ঘাব্বুন পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৬ জন নিহত হন, অন্য এক হামলায় খান ইউনুসের কাছাকাছি আরও দুই ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। পূর্বের হামলায় আহত একজন ফিলিস্তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তবে বোমাবর্ষণের পরিমাণ কিছুটা কমে আসায় এবং ইসরায়েলি সেনারা গাজার কিছু এলাকা থেকে প্রবেশ ও সরে যাওয়া শুরু করায় উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া লোকজনের লাশ উদ্ধারে তৎপর হয়ে উঠেছেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলমান এই সংঘাতের পর অবশেষে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস যুদ্ধবিরতিতে বসতে সমঝোতা করেছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে তাদের সামরিক অবস্থান গুটিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে, যুদ্ধের ধাক্কায় ঘরবাড়ি হারানো গাজার অসংখ্য মানুষ অস্থায়ী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়ে দুর্দশাগ্রস্ত জীবন কাটাচ্ছে। গত শুক্রবার সকালে ইসরায়েল সরকার হামাসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি অনুমোদন করে, যার ফলে সেনা প্রত্যাহার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই চুক্তির আওতায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মি ও বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার শুরু করেছে এবং জিম্মি মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বহনকারী বহু ট্রাক প্রবেশ করতে পারবে, যা লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষাকারী ত্রাণের আওতায় আসবে। যুদ্ধবিরতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো—জিম্মি ও বন্দি বিনিময়। আশা করা হয়, যুদ্ধের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাস ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, আর এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রথমে তার কারাগারে থাকা ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। পরে ধীরে ধীরে আরও ১৭০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এই তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে ১৫ জনকে পূর্ব জেরুজালেমে, ১০০ জনকে পশ্চিমে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে, কিছু হাই-প্রোফাইল নেতাকে মুক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। গাজায় হামাসের নেতা খলিল আল-হায়া ব্র keysগা নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধ শেষের গ্যারান্টি দিয়েছেন। এই চুক্তি দুই বছরের সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রথম ধাপ, যেখানে ইসরায়েলি সেনা গাজার কিছু এলাক থেকে প্রত্যাহার করছে। শুক্রবার বিকেলে গাজা এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অবস্থান ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিচ্ছে। আধা-অর্ধেক এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলমান। গাজার বিভিন্ন স্থান থেকে ধীরে ধীরে মানুষ ফিরে আসতে শুরু করেছে, যদিও বেশিরভাগ ঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত। ফলে অনেকেই ক্ষত-বিক্ষত, তবে নিজের এলাকায় ফিরতে পেরে তারা খুব খুশি। মহাদি সাকলা, একজন বাসিন্দা, বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির খবর শুনে আমরা খুবই আনন্দিত। গাজা শহরে আমাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত, যদিও বাড়িগুলো এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি হলেও, ফিরে যাওয়া আমাদের জন্য বড় আনন্দের।’ অন্যদিকে, খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া স্কুল শিক্ষিকা আলা সালেহ বলছেন, ‘রাস্তা দীর্ঘ এবং কষ্টদায়ক। খাবার ও পানি কম, আমি আমার পরিবারকে ঠেলে উত্তরে হাঁটছি। প্রচণ্ড কষ্টের মাঝে অনেকের জন্য গাড়ি বা ট্রাক ভাড়া করতে হয়, যা অনেকের জন্যই সাধ্য নয়।’ এই পরিস্থিতিতে, কয়েক হাজার মানুষ ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে ফিরে আসার পথে।