বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ও বিনিয়োগে ধীর গতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর হলো দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসে নিট এফডিআই প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইতিমধ্যেই দেখা গেছে, বিদেশি কোম্পানিগুলোর আস্থা বাংলাদেশের বাজারে বাড়ছে এবং তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে আরও বেশি আগ্রহী হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের লাভজনক বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার একটি বড় অংশ পুনঃবিনিয়োগ করছে, যা গত বছরের তুলনায় ৬১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মানে, শুধুমাত্র মুনাফা স্থানান্তরই নয়, বরং ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের লক্ষ্যেও তারা বাংলাদেশে অর্থাৎ দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি টাকা ঢালছে।
বিশ্বব্যাপী মূলধনের প্রবাহ কিছুটা কমলেও, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গ্রিনফিল্ড এফডিআইয়ের আলোকে এ খাতে ৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। আরও অবাক করার মতো বিষয় হলো, বিদেশি মূল কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ইউনিটগুলোতে অর্থায়ন বা ইন্টার-কোম্পানি ঋণের হার এক বছরে বেড়েছে ২২৯ শতাংশ।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র এই ছয় মাস নয়, বরং পুরো অর্থবছরই বাংলাদেশের বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ অর্থবছরে নিট এফডিআই প্রবাহ গত বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশের পাঁচটি প্রধান বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা— বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) ও বিসিক—মোট ৩,৫০০টির বেশি কোম্পানির মাধ্যমে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ১.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে, সরাসরি বিদেশি কোম্পানির পক্ষ থেকে এসেছে প্রায় ৬৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮.৭ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে বেড়ে হয় ৬৭০.৭ মিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে তা আরও বাড়ে এবং হয় ৯২৪.৪ মিলিয়ন ডলার। তবে, ২০২৪ সালে সাময়িকভাবে কিছুটা কমে সম্পূর্ণ বছর শেষে দাঁড়ায় ৬৭৬.৬ মিলিয়ন ডলার। প্রথম ছয় মাসে এই বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়ে ১,০৯২.৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছয়।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও বাংলাদেশের এই উন্নতি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি বিদেশিদের আস্থা প্রতিফলিত করে। তারা আশা করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সুবিধা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে আরও বড় ধরনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে।






