নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য করা আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ভোর ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাতজন বিচারপতির বিশিষ্ট বেঞ্চ এই গুরুত্বপূর্ণ শুনানি শুরু করে। এই শুনানিতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, আর রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে, ২৭ আগস্ট ২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের চার বছরের পুরোনো রায়কে আবার বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন দেয়া হয়। এই আবেদনের পরেই উচ্চ আদালত আপিলের অনুমতি দেন। এরপর, বিভিন্ন পক্ষে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আপিল করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার সহ পাঁচজন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
প্রযুক্তি অনুযায়ী, সংবিধানে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে ত্রয়োদশ সংশোধনী গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৯৯৮ সালে, এই সংবিধান সংশোধনীকে কেন্দ্র করে এক আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন, যা ২০০৪ সালে চূড়ান্তভাবে খারিজ হয়। এরপর, নানা আইনি প্রক্রিয়া লাভ করে ২০১১ সালে সরকারপ্রণেতারা সংবিধান থেকে এই ব্যবস্থাকে বাতিল করে ত্রয়োদশ সংশোধনী সংশোধন করেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষ সরাসরি আপিল করে এবং ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল ঘোষণা করে।
এর ফলে, ২০১১ সালে পাস হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন কার্যকর হয়, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপ করে। ২০১১ সালের ৩ জুলাই গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে এই পরিবর্তন অনুমোদিত হয়।
কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে, নদীজ রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে সরকার ও বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব আপিল করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বদিউল আলম মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া, জাহরা রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও, গত বছর ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য ব্যক্তিরাও এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন।
এই শুনানি ও আপিলের দীর্ঘ প্রক্রিয়া বাংলার রাজনীতি এবং সংবিধান নিয়ে চলমান বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। আদালত কিভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই এখন পুরো দেশের মুখ্য বিষয়।