ভারতের প্রাচীনতম ও অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্টক এক্সচেঞ্জ — কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) — এক শতকেরও বেশি সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনার পর অবশেষে বন্ধের পথে এগোচ্ছেও। এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে শুরু হলো এক যুগের সমাপ্তি। সোমবার সিএসই পালিত হয়েছে দীপাবলি ও কালীপূজার আনন্দমূর্খ উপলক্ষে, তবে এই আয়োজন পাশে লুকানো ছিল একটা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ছাপ।
ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে যে, ২০১৩ সালে ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি (SEBI) সিএসইর বিরুদ্ধে নানা নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে শেয়ার লেনদেন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, সিএসই বোর্ড মামলার প্রত্যাহার করে স্বেচ্ছা প্রস্থান প্রক্রিয়া শুরু করে। চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল সমস্ত শেয়ারহোল্ডার এক জরুরি সাধারণ সভায় এই প্রস্থান অনুমোদন দেন।
সিএসইর চেয়ারম্যান দীপঙ্কর বোস বলেন, ‘আমরা সেবির কাছে প্রস্থান অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা দিয়েছি। বর্তমানে সম্পদের মূল্যায়ন চলছে।’ তিনি যোগ করেন যে, রাজবংশী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি সংস্থাকে সম্পদের মূল্যায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, সিএসই একটি হোল্ডিং কোম্পানি হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবে, এবং তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিএসই ক্যাপিটাল মার্কেটস প্রাইভেট লিমিটেড (CCMPL) বিএসই ও এনএসইতে ব্রোকারেজ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
বিশেষত ১৯০৮ সালে যাত্রা শুরু করা সিএসই একসময় বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। ছোট ও মাঝারি শিল্পের শেয়ার লেনদেনে এই এক্সচেঞ্জ ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তবে ১২০ কোটি টাকার কেতন পারেখ কেলেঙ্কারির পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভেঙে যায় এবং এক্সচেঞ্জের অবনতি শুরু হয়।
স্টক ব্রোকার সিদ্ধার্থ থিরানি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে মা লক্ষ্মীর পূজা দিয়ে আমরা ট্রেডিং শুরু করতাম। ২০১৩ সালে সেবির লেনদেন স্থগিতের পর সবই থেমে যায়। এই দীপাবলি যেন সেই ঐতিহ্যের অপসরণ, শেষ প্রহর।’
সিএসইয়ের পক্ষ থেকে কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছা অবসর ঘোষণা করা হয়, যেখানে ২০ দশমিক ৯৫ কোটি রুপি এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, বছরে প্রায় ১০ কোটি রুপি সাশ্রয়ের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়। কর্মীরা এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও কিছু কর্মী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকবেন শুধুমাত্র নীতিনির্ধারক কার্যক্রমের জন্য।
২০২৪–২৫ অর্থবছরের বারিং প্রতিবেদনে চেয়ারম্যান বোস বলেছেন, “এসই ভারতের মূলধন বাজারে এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল।” বর্তমানে এখানে ১ হাজার ৭৪৯টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত এবং ৬৫০ জন নিবন্ধিত সদস্য রয়েছে।
অর্থাৎ, ৩ একর জমি সৃজন গ্রুপের কাছে ২৫৩ কোটি টাকায় বিক্রি করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা সেবির অনুমোদনের পর কার্যকর হবে।
এই বছরের দীপাবলি সিএসইর জন্য নয় শুধু, বরং এক যুগের অবসানের সময় হিসেবে চিহ্নিত হবে। ৯০ দশকের জমজমাট ট্রেডিং ফ্লোরের স্মৃতিকে বিদায় জানাতে কর্তৃপক্ষ এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এক্সচেঞ্জ চত্বরে আয়োজন হবে প্রতীকী পূজা ও বিদায় অনুষ্ঠান, যা এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের স্মৃতি চিরস্থায়ী করবে।






