সরাইলের ঐতিহ্যবাহী গ্রে-হাউন্ড কুকুর জেলার অন্যতম মূল্যবান ও বিরল প্রজাতির প্রাণী। শক্ত গড়নের পাঁজর এবং দীর্ঘদেহের এই কুকুররা সাহস, রণকৌশল এবং দৌড়ের সক্ষমতার জন্য সুপরিচিত। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি ও শিকারি দক্ষতার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডগ স্কোয়াডেও ব্যবহৃত হয় তারা। তবে এখন এই প্রাচীন প্রজাতির কুকুরের অস্তিত্ব বিপন্নের মুখে। সরাইল জুড়ে হাতে গোনা কিছু পরিবারের বাসে দেখা যায় এই কুকুরের অস্তিত্ব। এই দামী এবং বিরল প্রজাতির কুকুরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে প্রশাসন এখন একটি গ্রে-হাউন্ড প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইনের মতে, বাণিজ্যিকভাবে এই প্রজাতির কুকুরের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিয়ে তারা এখনও প্রাথমিক আলোচনা ও পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর লক্ষ্য, এই প্রাচীন প্রজাতির কুকুরের জাতটিকে সুরক্ষিত রাখা। সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু পরিবার ঐতিহ্যবাহী এই কুকুরগুলো বংশপরম্পরায় পালন করে আসছেন। নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চৌরাগুদা গ্রামের ভাই তপন লাল রবিদাস ও যতন লাল রবিদাস এই কাজের প্রতি অনুরক্ত। তবে উচ্চ ব্যয়ের খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেক সময় এই পালনকারীরা অর্থের অভাবে সমস্যা Facing করে থাকেন। প্রাচীনকাল থেকেই এই কুকুরের ইতিহাস স্থানীয়জনের মুখে ফিরেফিরে আসছে। দুইশত বছর আগে জমিদার দেওয়ান মোস্তফা আলী কলকাতায় যাওয়ার পথে ইংরেজ সাহেবের কাছে একটি সুন্দর কুকুরের দেখা পান, যা তিনি হাতির বিনিময়ে সংগ্রহ করেন। এভাবেই এই কালেকশনের সূচনা হয় বলে জানা যায়। একসময়ে সরাইলের প্রতিটি বাড়িতে এই কুকুর দেখা যেত, তারা ঘরের নিরাপত্তা ও শেয়াল তাড়ানোর কাজে ব্যবহার হত। তবে বর্তমানে এই প্রাচীন প্রজাতি লোপপ্রায়। তার কারণ, ব্যয়বহুল খাদ্য ও পালন খরচের জন্য বেশিরভাগ পরিবার এই কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন। এখন কিছু শখের পোষ্য হিসেবে এই কুকুরের সংখ্যা খুবই কম। শুধু তপন ও যতন রবিদাস পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে এগিয়ে আসছেন। তারা কুকুরের ছানাগুলো বিক্রি করেন স্ট্যাম্প করে, তবে ব্যয়বহুল খাদ্য ও খরচের কারণে এই কাজে তারা কষ্টে আছেন। তপন লাল রবিদাস বলেন, প্রতিদিন তাদের অন্তত ৩০০ টাকার খাবারের প্রয়োজন হয়, যা তারা সবসময় জোগাতে পারেন না। কম আয়ের মধ্যে তাদের সংসার চালানোই হিমশিম। এই পরিস্থিতিতে, প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই প্রাচীন কুকুরের অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। এই কুকুর শুধু সরাইলের ঐতিহ্যই নয়, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক প্রজনন, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই কুকুর গোপন তথ্য সরবরাহ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবহারযোগ্য। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও এই বিরল প্রজাতির সংরক্ষণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। ১৯৮৩ সালে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সরাইল উপজেলা সদরে একটি গ্রে-হাউন্ড কুকুর সংরক্ষণ কেন্দ্র নির্মিত হলেও পরবর্তীতে উপযুক্ত পরিচালনার অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তদ্ব্যতীত, ২০০১ সালে স্থানীয় এক যুবকও কুকুর প্রজননের উদ্যোগ নিলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইনের মতে, এই কুকুরের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব দেশ ও বিদেশের পরিচিতি বহন করে। তারা প্রভুভক্ত, বাড়ি পাহারা দেয় এবং গোয়েন্দা কার্যেও সক্ষম। তাই, এই বিরল প্রজাতির সংরক্ষণ ও পুনঃপ্রজননের জন্য সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি।






