ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অভিযোগ করেছেন যে মার্কিন সরকার তার দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে। সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ যুদ্ধজাহাজটি দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির দিকে পাঠানোয় উত্তেজনা আরো বেড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বেড়ে চলেছে এবং পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠছে। মাদুরো সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তার সরকারের উপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নতুন করে যুদ্ধ শুরু করতে চাইছে। বহু সন্দেহের মধ্যে ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড নামে অশ্বশক্তিসম্পন্ন এই রণতরীতে ৯০টির বেশি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প ক্ষোভের সঙ্গে মাদুরোকে নির্দোষ সংগঠিত অপরাধী চক্র ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ এর নেতা হিসাবে অভিযুক্ত করেছেন। তবে মাদুরো এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভেনেজুয়েলায় কোকেন পাতা উৎপাদিত হয় না। তিনি আরও বলেছেন, ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ চক্রটি খুন, চাঁদাবাজি ও মানব পাচারের জন্য পরিচিত এবং এটি কোনও দেশের জন্য শান্তির জন্য নয়।
নিকولাস মাদুরো ২০১৩ সাল থেকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি হুগো শ্যাভেজের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের এপ্রিলে বিশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন এবং ওই বছর ১৯ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি প্রায় ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। সর্বশেষ গত বছরের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি আবার জয়লাভ করে তার তৃতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তবে এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে অনেক দেশ—including যুক্তরাষ্ট্র—তার পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার। ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় সিআইএর অভিযানের অনুমোদন দেন এবং দেশের মাদক চক্রের বিরুদ্ধে স্থল হামলার পরিকল্পনাও বিবেচনা করছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন বাহিনী মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি নৌবাহিনী চালিত নৌকায় বোমা হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৩ জন নিহত হন। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলাগুলো আইন লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।
এর জবাবে ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির প্যাদ্রিনো লোপেজ উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক মহড়া শুরু করেছেন। তিনি বলছেন, এসব সামরিক মহড়া দেশকে বড় আকারের সামরিক হুমকি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবে। ভেনেজুয়েলার সরকারি টেলিভিশনে উপকূলীয় অঞ্চলে সেনা সদস্যদের মোতায়েনের দৃশ্যপরদর্শন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ওয়াশিংটন গত আগস্ট থেকে মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে আটটি নৌবাহিনীর জাহাজ এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। কারাকাস মনে করছে, এর পেছনে মাদুরো সরকারকে উৎখাত করার পরিকল্পনা লুকানো রয়েছে। এরই মধ্যে, মাদুরো বিরোধীদলে থাকা নেতা লিওপোল্ডো লোপেজের নাগরিকত্ব বাতিলের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। লোপোল্ডো অভিযোগ করেছেন যে, তার উপর আক্রমণের উসকানি দেওয়া হচ্ছে। তিনি ২০২০ সাল থেকে স্পেনে নির্বাসিত থাকলেও ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির সমর্থনে কথা বলেছেন। এর পাশাপাশি, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো এবং তার পরিবারের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।






