রাজধানীর পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সামনে আধাঁর নির্জন স্থানে বন্দুকের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হন। এই ঘটনা ঘটে গতকাল সোমবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে, যখন হাসপাতালের মূল গেট থেকে মাত্র ১০ থেকে ১৫ ফুট দূরে পেট্রোলের জন্য অপেক্ষমাণ অবস্থায় ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। নিহতের নাম তারিক সাইফ মামুন (৫৫), যিনি লক্ষ্মীপুর জেলার বাসিন্দা এবং বর্তমানে ঢাকায় আফতাবনগরে এক ভাড়া বাসায় থাকতেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই মুখোশধারী দুর্বৃত্ত এসেছিল আর তারা তার দিকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়ে। এরপর গুলিবিদ্ধ মামুনকে প্রথমে ঢাকান্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়, পরে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আর তাকে আর জীবিত রাখতে পারেননি। হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রাথমিক জানান, তার শরীরে চারটি গুলির চিহ্ন ছিল। পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে এসে তারা দেখতে পান, নিহত মামুনের শরীরে চারটি গুলি লেগেছে। কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার ফজলুল হক জানান, পরীক্ষামুলকভাবে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে এই গুলির ঘটনা ঘটে। পরে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ জানান, সকাল ১১টার দিকে আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকা মামুনকে দেখতে পান তারা। পরে তাকে ন্যাশনাল মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে আসা হয়। পুলিশ জানায়, নিহত ওই ব্যক্তি জজ কোর্টে মামলার হাজিরা দিতে এসেছিলেন, তবে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি তিনি আসামি নাকি বাদী। এই ঘটনায় নিষ্পত্তি বা ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার আহসান উদ্দিন সামি জানান, নিহতের নাম তারিক সাইফ মামুন, তিনি এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। পুলিশ তারিখে চেষ্টা করছে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে। এদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামুন আগে থেকেই বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। শোনা যায়, তিনি সোহেল চৌধুরী ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। এর আগে, গত বছর সেপ্টেম্বরে তারিক সাইফ মামুনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে তেজগাঁও এলাকায়, যেখানে এক মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীল মারাত্মক গুলিতে আহত হন। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর সেই ভুবন চন্দ্র শীল মারা যান। পুলিশ বলছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত এই মামুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গতকাল সকালেও স্থানীয় লোকজন তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেন। কোতোয়ালি থানার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গুলির শব্দ শুনে দ্রুত সেখানে গিয়ে দেখলাম, অজ্ঞাত এক ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে আছেন এবং তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে।’ তাঁর পরিচয় জানাতে গিয়ে তিনি জানান, তার নাম তারিক সাইফ মামুন, যা তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুইজন ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে তারিক সাইফ মামুনকে পেছন থেকে গুলি করে এবং ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি বলেন, ‘নিহত ব্যক্তি একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি এবং যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’ নতুন এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সূত্রপাত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন।






