বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের প্রতিনিধি দলের সাথে যুক্তরাষ্ট্র মহাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ ও ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রের জন্য জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি সফরকাজের অংশ হিসেবে আজ ঢাকায় এক কৌশলগত পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকটি বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে গভীর আলোচনা করেছে। ওই সভায় দেশের পোশাক শিল্পের নেতারা তাদের নীতিগত সহায়তার প্রয়োজনীয়তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শিল্প বিকাশের জন্য সংস্কারমূলক উদ্যোগের ওপর জোর দিয়েছেন।
বিজিএমইএ (বাংলাদেশ গার্মেন্টস মালিকান সংগঠনের) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার জন্য সহযোগিতা ও স্থিতিশীল নীতিমালা অপরিহার্য।’ তিনি দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক দুর্বলতাগুলির কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গ্যাসের দাম ২৮৬% বৃদ্ধি পেয়েছে, আর ২০২৫ সালে দ্বিগুণের বেশি দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে, যা শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
তিনি আরও জানান, শিল্পের চলাচলে লজিস্টিক সেবা সমস্যা, বন্দরে অদক্ষতা, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এর পাশাপাশি, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, এসব পরিবর্তন শিল্পের জন্য নতুন আর্থিক চাপ তৈরি করছে।
বিজিএমইএর দৃষ্টিতে, দেশের অর্থনৈতিক সূচকের মন্থর গতি, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, স্বল্প কর-জিডিপি অনুপাত ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—এসব সমস্যা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রগতি আটকাচ্ছে। এছাড়া, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশেষ করে, পণ্য বৈচিত্র্য কম ও আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
সভায় অংশগ্রহণকারী রপ্তানিকারকরা সরকারের জন্য স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী বিভিন্ন প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে রয়েছে: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিকল্প প্রণোদনা প্যাকেজ চালু, ব্যাংকগুলোর সুদের হার কমানো, তীব্র আর্থিক চাপ মোকাবেলার জন্য রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (EDF) পুনঃস্থাপন ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ। পাশাপাশি, বন্দরে অদক্ষতা কমানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানানো হয়।
তাদের আরো দাবি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের GSP+ সুবিধা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে এবং নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য FTA ও EPDA মুক্তবাণিজ্য চুক্তির আলোচনাকে ত্বরান্বিত করতে হবে।
মধ্যম পর্যায়ের পরিকল্পনায় রয়েছে: ব্যাংকিং খাতে শাসনব্যবস্থা জোরদার, খেলাপি ঋণ কমানো, গভীর সমুদ্র ও আঞ্চলিক উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন, এবং দক্ষতা উন্নয়ন, গবেষণা ও প্রযুক্তির আধুনিকীকরণে বিনিয়োগ বাড়ানো।
আরো বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ, ডিকার্বনাইজেশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা, ও প্রযুক্তি ও বৃত্তাকার অর্থনীতি চর্চাকে রূপ দেয়ার নীতি গ্রহণ জরুরি।
অন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য মাহমুদ হাসান খান বিশেষ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সকল পর্যায়ে উন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অন্তত তিন বছরের দ্রুত পরিবর্তনের সময় নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক রাখতে স্বল্প সুদে অর্থায়ন, সংমিশ্রিত অর্থায়ন (blended finance) ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।






