অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া এখন ধীরে ধীরে একটা অবধারিত ঘটনাতে পরিণত হচ্ছে। গতকাল শনিবার রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত ‘নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক-নির্বাচনি উদ্যোগ’ শীর্ষক আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় তিনি এই কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সকাল সাড়ে ১১টায় এবং চলমান ছিল দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত, যেখানে রাজশাহীর পবা উপজেলার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ড. দেবপ্রিয় বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ, প্রার্থী নির্বাচন এবং কার্যক্রম সব কিছুর জন্য প্রায়ই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু সবাই আশা করছে যে, এই নির্বাচনটিতে সময়মতো, সুচারু ও অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে এবং এর ফলে দেশের অগ্রগতি আরও শক্তিশালী হবে। বিশ্লেষক বলছেন, এই প্রক্রিয়ায় সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ—শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক, রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মী, আইনজীবী, সাধারণ জনগোষ্ঠী, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী—প্রশ্ন উত্থাপন করছেন। তারা আলোচনা করছেন সামগ্রিক সংস্কার, সুশাসন, নিরাপত্তা, প্রার্থী নির্বাচন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর। আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কি বিষয় বিবেচনা করতে হবে, তার দিকনির্দেশনাও উঠে এসেছে। সভা শেষে ড. দেবপ্রিয় বলেন, অংশগ্রহণকারীরা চান এমন নির্বাচন যেখানে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে ব্যয়ের পরিমাণ কমানো, সোশ্যাল মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগের অপব্যবহার বন্ধ করা এবং উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়গুলি আলোচনায় আসছে। তিনি আরও বলেন, যদি নির্বাচনের খরচ কমানো না হয়, তাহলে দুর্নীতি কায়েমে সমস্যা হবে। একইসাথে, জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব ও তাদের বছরে একবার করে হিসাব দেওয়ার ব্যবস্থা প্রয়োজন। ড. দেবপ্রিয় উল্লেখ করেন যে, রাজশাহী কেন্দ্র করে চারটি বড় বিষয় উঠে এসেছে: প্রথমত, মরুকরণ ও জলসংকট; দ্বিতীয়ত, পদ্মা ও তিস্তার পানির সমস্যা; তৃতীয়ত, গ্যাসসহ জ্বালানি সংকট; এবং চতুর্থত, যোগাযোগের সমস্যা। এছাড়া শিল্পায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা এবং দরিদ্রদের সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। নিরাপত্তা বিষয়টিও ছিল অন্যতম বড় আলোচ্য, যেখানে মানুষ শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা এবং ব্যবসায়িক নিরাপত্তার বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন। নিরাপত্তা এখন সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসনের দক্ষতা, রাজনৈতিক মনোভাব ও সরকারের অভিপ্রায়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, এই নিরাপত্তা ছাড়া সুষ্ঠু ও স্বাধীন একটি নির্বাচন সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে, এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে যাতে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন সম্পন্ন হয়।






