বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের ইসলামি ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করে তুলতে ভালো হিসাবরক্ষণ, সুশাসন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও জানান, উচ্চমানের নিরীক্ষা মানদণ্ড অনুসরণ করা আবশ্যক, যাতে চলমান ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় থাকে। এটি বাংলাদেশের ইসলামি অর্থনীতির জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।
রোববার ঢাকাস্থ একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ফিন্যান্স সামিট-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। গভর্নর জানান, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ইসলামী ব্যাংকিং আইন প্রণয়নের জন্য কাজ করছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হবে।
অতঃপর তিনি বলেন, ‘দেশে ইসলামি ব্যাংকিংকে আরও শক্তিশালী করতে হলে ভালো হিসাবরক্ষণ, সুশাসন ও নিরীক্ষার বিকল্প নেই। এই কাজের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিকল্পনা করছে।’
আহসান আরও আশ্বস্ত করে বলেন, ‘উচ্চ মানের নিরীক্ষা বাংলাদেশি ইসলামি অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম।’ তিনি স্বীকার করেন, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ইসলামী ব্যাংকিং খাত কিছুটা অস্থিরতা হয়ে পড়লেও, এই খাতটি কাঠামোগতভাবে এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী এবং অন্যান্য খাতের তুলনায় উন্নতির পথে রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ইসলামি অর্থনীতি ভাল ফল করছে, তবে বাংলাদেশে আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি অস্থির থেকে মুক্ত থাকতাম, তবে আরও ভাল অবস্থানে থাকতে পারতাম। তবুও খাতটির প্রতি আমাদের আস্থা অটুট এবং বিনিয়মতকারীরাও ধীরে ধীরে আস্থা পুনরুদ্ধার করছেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর উল্লেখ করেন, ব্যাংকটির সমস্যাগ্রস্ত কয়েকটি ইসলামি ব্যাংক পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ইতোমধ্যেই কিছু ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বলে বলেন, দেশের বৃহৎ বেসরকারি ইসলামি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল), এখন ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং বৃহত্তম গ্রাহক ভিত্তি রয়েছে। তবে, অন্ধকারে থাকা বিষয় হলো, কিছু অনিয়ম এখনও রয়ে গেছে।
তিনি জানান, আইবিবিএল থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা একক পরিবারের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়েছিল, যা ব্যাংকের সম্পদে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবে, এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যেও গ্রাহকের আস্থা অটুট রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এই ব্যাংকটি তারল্য সংকটে পড়েছিল, তবে বর্তমানে সেটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়াও, এই বছর ইসলামী ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ আমানত প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা এই খাতের জন্য এক ইতিবাচক সংকেত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, তারল্য সংকট মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য — আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তিনি জানান, পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা দায়িত্বশীল ও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক হবে, এটাই প্রত্যাশা।
অবশেষে, গভর্নর খাতটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা চাই, বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং যেন একটি সুশৃঙ্খল, সুশাসিত এবং টেকসই পথে এগিয়ে চলে।’






