বাংলাদেশে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি সম্প্রতি একটি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে, যেখানে টানা দুই বছর রপ্তানি কমে যাওয়ার পর আবার গত বছর থেকে রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে প্রায় ২২ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। তবে অক্টোবর Endে এই প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানিকারকদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্ববাজারে বাগদা চিংড়ির চাহিদা কমে যায়, যেখানে একই সময়ে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা বেশি ছিল। তখন বাংলাদেশে উচ্চফলনশীল জাতের চাষ শুরু না হওয়ায় হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি প্রভাবিত হয়। তবে গত বছর থেকে আবার বাগদার চাহিদা ও রপ্তানি বাড়তে শুরু করে।
রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে করোনার প্রভাব কাটিয়ে হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি আয় প্রায় ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪১ কোটি ডলারে পৌঁছায়। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে এই রপ্তানি কমে যায় এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় মাত্র ৩০ কোটি ডলার। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ মৌসুমেও রপ্তানি অর্ধেকের মতো কমে যায়, তবে বাড়তি ক্রয়াদেশের কারণে শেষমেশ এই অর্থবছরে রপ্তানি ফের বাড়ে ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাংলাদেশ থেকে ১২ কোটি ডলারের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। পূর্বে অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১১ কোটি ডলারের মতো। দেশের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র থাকলেও, সেই সময়ের শীর্ষ গন্তব্য ছিল চীন, যেখানে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য। এছাড়া, নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি ডলার, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪ কোটি ডলার, বেলজিয়ামে ৪ কোটি ডলার, জার্মানিতে ২ কোটি ৯৬ লাখ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২ কোটি ডলার মূল্যের হিমায়িত চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যেখানে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের রপ্তানি বিপরীতে নগদ সহায়তার জন্য জাহাজীকরণের সময় বরফের পরিমাণ দেখানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রপ্তানি অর্থের হিসাবের জন্য বরফসহ মোট পণ্য ওজন থেকে চিংড়ি বা মাছের ওজন বাদ দিতে হবে, এবং এরপর সেই ফলাফলের সাথে বরফের পরিমাণ যুক্ত করে সরকারি নির্ধারিত হার অনুপাতে পরিমাপ করতে হবে।
এছাড়া, রপ্তানি দেশের বাইরে থেকে মূল্য প্রত্যাবাসন হলে সেটি নিশ্চিত করতে হবে, যার জন্য রপ্তানি আদেশ প্রদানকারী বা সংশ্লिष्ट উৎস থেকে উপযুক্ত প্রমাণপত্র সংগ্রহ করতে হবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রপ্তানি অনুমোদন ও কার্যকরী প্রমাণপত্র থাকলে, একই সময়ে দুই দেশের মূল্য প্রত্যাবাসন হলে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
সাধারণত, হিমায়িত চিংড়ি ও মাছের রপ্তানির জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য বা গভীর সমুদ্র থেকে জলযানে আহরিত ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান হতে হবে। এখন থেকে, এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, আবেদনপত্রের সঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস অ্যাসোসিয়েশনের অথবা বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অবশ্যই মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদিত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে।






