বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের সময় আমরা একটি ত্রানজিশনাল বা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকালীন যুগে অবস্থান করছি। এই ট্রানজিশনাল সময়ের মধ্যে একদিকে রাজনৈতিক অস্পষ্টতা বিরাজ করছে, অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে শিডিউল ও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শীঘ্রই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, নির্বাচন কেবলমাত্র একটি দিক নয়; এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের স্থাপন, দেয়া এবং মুক্ত সংস্কৃতি গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সত্যিকারভাবে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর গণতন্ত্রের অভাব।
গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার একসঙ্গে যৌথভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, একটি টেকসই ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়তে বিচার বিভাগ, সংসদ, গণমাধ্যম ও প্রশাসনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে। তিনি অতীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর ঘটে যাওয়া দমন-পীড়ন, গুম-খুন ও মিথ্যা মামলার বাস্তবতা তুলে ধরেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে লক্ষাধিক মানুষ এই ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। এসব দুঃখজনক ঘটনার সঠিক ইতিহাস গড়তে ও ডকুমেন্টেশন নিশ্চিত করতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানানো হয়।
বিএনপির সংস্কার ও ধর্মীয় সাম্প্রতিক বিতর্কগুলো নিয়েও তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপি একটি বিপ্লবী দল নয়; বরং একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি হিসেবে সব ধর্ম, বর্ণ ও মতাবলম্বীদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে ‘রেইনবো স্টেট’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। তার ভাষায়, ‘আমরা সবাই লিবারেল ডেমোক্রেটস’।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দেশের পরিস্থিতি এমন যেন, একদিকে শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে যোগ্যতার অভাবে সরকারের বিভিন্ন মহল ভয়ঙ্কর মবক্রেসি এবং নিরাপত্তা বৈষম্য চালাচ্ছে। তিনি মনে করেন, কিছু মহল এই পরিস্থিতিকে বিভ্রান্তি ও বিভাজনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। এ জন্য সতর্ক থাকতে হবে এবং এসব মহলের উদ্দেশ্যে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
তাঁর মতে, ভারসাম্যহীন গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সংকটের মূল কারণ। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার, যেখানে প্রত্যেকে তাদের মতামত প্রকাশের জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত। দুর্ভাগ্যবশত, দেশে অনেকেই অন্যের মত প্রকাশ সহ্য করতে চান না।
মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার গণতন্ত্রের গুরুত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁর ছোট বিবৃতিতেই দলের ও দেশের জন্য মূখ্য নির্দেশনা রয়েছে—“প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়, আসুন সবাই মিলেঘরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করি।” এছাড়াও, বিদেশে থাকা তারেক রহমানও দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বৈঠকের শেষাংশে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। এতে আরও বক্তব্য দেন দলের অন্য নেতারা, যেমন সেলিমা রহমান, সাইফুল হক, বি এম নাগিব হোসেন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুল মোনায়েম মুন্না, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং বাবুল তালুকদার। পাশাপাশি, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী—including তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন— উপস্থিত ছিলেন এই গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনের অংশ হিসেবে।






