চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউট দীর্ঘ এক দশক ধরে শিক্ষকদের নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কবলে পড়েছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন খাতে বিপুল অর্থ ব্যয়, আয়কর ফাঁকি, প্রশ্নপত্র প্রুফ এবং মডারেশন খাতে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি বিস্তারিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেছেন, ২০২৫ সালের ১২ নভেম্বর ওই লিখিত অভিযোগে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবু সোলেমান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নুরুল আল আমিনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
অভিযোগে জানানো হয়, দরপত্র ছাড়াই ২০২০-২১ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ভবনের ৪র্থ ও ৫ম তলার নির্মাণ ও সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়, যেখানে কাজের জন্য নির্ধারিত নিয়মনীতি উপেক্ষা করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগের জন্য দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করানো হয়, আর ব্যয় হিসেবে ধরা হয় ১ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা, যদিও এই বিষয়ে কোনো সরকারি অনুমোদন বা নিরীক্ষার রেকর্ড নেই।
প্রতিষ্ঠানটিতে ট্রাস্ট পরিচালিত হলেও ২০২৪-২৬ মেয়াদে নতুন করে প্রধান শিক্ষক নিজ পছন্দের সদস্যদের তালিকা তৈরি করে কমিটি গঠন করেছেন, যা শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রুফ ও মডারেশন খাতে প্রতিটি পরীক্ষায় ১২,৫০০ টাকা করে অর্থ উত্তোলন ও ভাউচার তৈরি করে বড় অঙ্কের অর্থ তোলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মাধ্যমে কিছু কাজ সম্পন্ন করে তাদের নামে বড় অঙ্কের ভাউচার তৈরি ও স্বাক্ষর নেয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠে।
শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া, পরীক্ষার ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) কেনা ও অন্যান্য কার্যক্রমের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং অনিয়মে বছরের পর বছর নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ চলেছে। প্রধান শিক্ষক বছরে প্রায় ১৭ লাখ টাকার আয় করেন বলে জানা গেছে, তবে সেই আয়ের কোনো কর পরিশোধ করেননি। এছাড়া, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ঘর ভাড়া ৩,০০০ টাকা হলেও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের জন্য অতিরিক্ত ৩,০০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়, আর অন্যান্য খাতে তালमेल হয়নি।
অভিযোগে বলা হয়, আবু সোলেমান দায়িত্ব নেবার পর থেকে সরকারি বরাদ্দের আবেদন বন্ধ করে ব্যক্তিগত স্বার্থে অর্থ লেনদেনের জন্য উন্নয়ন কমিটি ও অর্থ আত্মসাতের নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। জামালখান রোডে অবস্থিত শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউট ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৩ সালে মাননীয় সরকার কর্তৃক এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে দুই শিফটে অন্তত ৫০ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, বিভিন্ন নির্মাণকাজের ভাউচারে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে তারা বলছেন, “এটা চাকরিরই অংশ; স্বাক্ষর না করলে চাকরি থাকবে না।” নানা অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়ে যোগাযোগের জন্য প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবু সোলেমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি এবং ক্ষুদে বার্তার কোনো উত্তর দেননি।
অতিরিক্ত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রামের সভাপতি মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী বলেন, ‘আমি এখন এই বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’ তবে নথিপত্র অনুযায়ী দেখা যায়, গত ২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবরে ব্যয়ের হিসাব তার স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।






