বিমা আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে যে নতুন ধারা ও উপধারা সংযোজন করা হয়েছে, সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও চৌকস একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। এই কারণেই প্রথমে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (আইডিআরএ) সংস্কার অপরিহার্য বলে মনে করছেন খাতের বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তারা। এই সভার মূল লক্ষ্য ছিল বিমা খাতের উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য বিমা আইন-২০১০-এর সংশোধনী ও খাতের সংস্কার বিষয়ক আলোচনা। সভাটি আয়োজিত হয় বিমা বিষয়ক বিশেষায়িত প্ল্যাটফর্ম ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডির পক্ষ থেকে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিআরএর সাবেক সদস্য (লাইফ) সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা। এর পাশাপাশি অংশ নেন বিআইপিডির মহাসচিব কাজী মো. মোরতুজা আলী ও অর্থকাগজ পত্রিকার সম্পাদক প্রণব মজুমদার। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডির সম্পাদক ও প্রকাশক মোস্তাফিজুর রহমান টুংকু।
অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকৃত সংস্কার বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে পারেনি। তারা অভিযোগ করেন, আইডিআরএ আইন ২০১০ এর সংশোধনী ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কারের কোনও কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে গ্রাহকদের বকেয়া দাবিসহ তহবিল তছরুপের বিষয়েও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেনি সংস্থাটি। পাশাপাশি, নন-লাইফ বিমা খাতেও অবৈধ কমিশন বন্ধে ও দক্ষ জনবল তৈরির ক্ষেত্রে অপারগতার পরিচয় দিয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, ২০১০ সালে যখন বিমা আইন প্রণীত হয়, তখন থেকেই কেন এই আইনের সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে—তা স্পষ্ট নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার গঠনও ছিল ২০১০ সালে, কিন্তু তখনো তারা সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যাদের বেশিরভাগেরই বিমা বিষয়ে যথাযথ অভিজ্ঞতা নেই। ফলে, আইন প্রয়োগে যথার্থতা নিশ্চিত করতে সংশোধনের আগে এর পর্যালোচনা আরও বিস্তারিত হওয়া দরকার।
মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, বিমা আইন-২০১০ এর ১৬০ ধারার মধ্যে প্রায় শতভাগ ধারাই অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে এর উপধারাগুলোর পরিবর্তন, সংযোজন বা সংশোধন করা হয়েছে, যা কার্যকর ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, বেশ কিছু ধারার বিলুপ্তির প্রস্তাব এসেছে। নতুন ৬৪টি ধারাও সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
সচিবালয় থেকে এই বিষয়ে উপসচিব ও যুগ্ম সচিবসহ কর্মকর্তাদের লিয়েনের মাধ্যমে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তবে তাদের মধ্যে অনেকেরই বিমা বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। এখনো পর্যন্ত, এই কর্তৃপক্ষের বয়স ১৫ বছর অতিক্রম করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আইডিআরএ যদি সত্যিই শক্তিশালী ও দক্ষ হয়ে উঠতে চায়, তবে প্রথমত সংস্থাটির সংস্কার প্রয়োজন। সেবা, নিয়ন্ত্রণ ও বিকাশের জন্য একটি জনবান্ধব, দক্ষ ও আধুনিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিমা শিল্পের উন্নতি অপরিহার্য। বিমার সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, এবং এই শিল্পকে সর্বজনীন ও রিটেইল পর্যায়ে নিয়ে আসার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষেরও সক্রিয় ভূমিকা থাকতে হবে। সম্যক ব্যবস্থা নিতে হলে, আইন যেন মানুষের চাহিদা ও সুবিধার কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।






