বিচার ব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাইজেশনের গুরুত্ব আরোপ করে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, দেশের ই-পারিবারিক আদালত চালু হওয়ায় নিশ্চিতভাবেই ভোগান্তি ও দুর্নীতি কমবে এবং বিচার প্রক্রিয়া অনেক দ্রুততর হবে। তিনি বলেন, এই ডিজিটাল আদালত কার্যক্রমের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীরা আগে যেমন ধরে ঘোরতেন, এখন তাদের জন্য সে ঝামেলা অনেকটাই কমে যাবে।
গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে ই-পারিবারিক আদালত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. আসিফ নজরুল এ কথা বলেন। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সহযোগিতা দিয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়।
আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সকলের এক মিলিত প্রয়াসে নানা সংস্কারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ২১টি আইন সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলছেন, যদি এই সংস্কারগুলো টেকসই করে রাখা না হয় এবং সংশ্লিষ্ট সবাই যদি এ বিষয়ে সক্রিয় না থাকেন, তবে এর সুফল পাবেন না।
তিনি আরও জানান, ই-জুডিসিয়ারি ও ই-রেজিস্ট্রेशन প্রকল্প অগ্রসর হচ্ছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো এই প্রজেক্টের সাথে যুক্ত হয়ে এগুলো সফল করবে।
একই সঙ্গে, বাংলাদেশে পারিবারিক বিরোধের ক্ষেত্রে ভ্রান্ত ধারণার বিষয়েও সতর্কতা দেন তিনি। আগে যেখানে উচিত ছিল পারিবারিক আদালত যাবেন, এখন অবশ্যই প্রথমে লিগ্যাল এইড অফিসে যেতে হবে। এরপর সেই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে তবেই পারিবারিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। এতে ভোগান্তি ও দুর্নীতি কমবে এবং সময়ও বাঁচবে।
তিনি জানান, আইনের মাধ্যমে এখন লিগ্যাল এইড অফিসে এক বিচারকের পরিবর্তে তিনজন বিচারক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া আরও কার্যকর হবে। বর্তমানে ২০ জেলায় এই কার্যক্রম চালু হয়েছে এবং চলতি বছরের মধ্যে এটি দেশের সকল জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তার পরিকল্পনায় রয়েছে, যখন এই প্রকল্প সারাদেশে চালু হবে, তখন মামলার এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেকের বেশি লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। এতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মামলার জট অনেকটাই কমে আসবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
অর্থনৈতিক উন্নতির দিক থেকে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংস্কারটি হলো ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন করের চালু। তিনি প্রশ্ন করেন, “ভ্যাট কি সংবিধান পরিবর্তন করে চালু হয়েছে? না, এটা আইনপ্রক্রিয়ায় হয়েছে।” পরিবেশ সংরক্ষণ, এসিড সন্ত্রাসের নিয়ন্ত্রণসহ বড় বড় সংস্কারও আইন মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, সিঙ্গাপুরকে মূলত সংস্কার করতে সময় লেগেছে দশ বছর, রাতারাতি প্রয়োজন হয় না। সংস্কার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং ধৈর্য্য সঙ্গে চালিয়ে যেতে হয়।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ই-পারিবারিক আদালত বর্তমান সরকারের বিচার ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে একটি যুগান্তकारी উদ্যোগ। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই ডিজিটাল ব্যবস্থা বিচারপ্রার্থী, বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে আসবে—সময়, অর্থ ও ভ্রমণের ঝামেলা কমবে। বিশেষ করে নারী ও শিশুর নিরাপত্তায় এই ব্যবস্থা খুবই সহায়ক হবে।
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, এই ই-পারিবারিক আদালত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে, যা বিচার ব্যবস্থার গুণগত মান উন্নত করবে। তিনি আশাবাদী, শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বাড়ালে এর সুফল আরও বেশি পাওয়া যাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ই-পারিবারিক আদালতের এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের বিচার ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও কার্যকর করে তুলবে।
সবার প্রতি উৎসাহ দিয়ে তিনি জানান, এই প্রকল্পের সফলতা নিশ্চিত করতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। সংক্ষিপ্ত সময়ে পুরো দেশের বিচার ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশনের এই নতুন দিক অগ্রসর হবে বলে প্রত্যাশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আইনের বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থাপিত হন এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা।






