বিএনপি খুব স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা একটি স্বাধীন, মুক্ত ও স্বতন্ত্র গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা এবং নিশ্চিত করতে চায়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বিষয়ে বলেন, তারা এই লক্ষ্য নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক মতবিনিময় সভায় এ কথা উল্লেখ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রতিশ্রুতি খুব পরিষ্কার। আমরা বারবার বলেছি যে আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি গণমাধ্যম দেখতে চাই এবং সেটি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ তিনি আরো জানান, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যম সংস্কারের—toতদ্বারা একটি স্বচ্ছ ও মুক্ত মিডিয়া পরিবেশ গড়ে তুলতে—একটি কমিশন গঠন করার পরিকল্পনা ছিল। ইতোমধ্যে সেই কমিশন গঠন সম্পন্ন হলেও, তার প্রতিবেদন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনায় বসা হয়নি। তিনি আশ্বাস দেন যে, যদি দলটি সরকার গঠন করে, তাহলে এই গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের দিকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, ‘সরকার পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণের হাতে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবেই এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবো।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘সংস্কার যদি হৃদয়ে না ধারণ করা হয়, মনের মধ্যে না বোধ করা হয়, এবং পরিবর্তনের দরকার অনুভব না করা হয়, তাহলে কতটুকু পরিবর্তন আনা সম্ভব, তা বলা কঠিন।’
তিনি অতীতের উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তখন জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে কিছু মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদপত্রের ব্যবস্থা করেছিলেন। বিএনপি যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসে, তখনই গণমাধ্যমের উন্নয়ন বা স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করার জন্য নানা ব্যবস্থা নেয়।
মহাসচিব বলেন, সাংবাদিকদের বিভিন্ন ইউনিয়ন থাকলেও অনেক সময় তাদের মধ্যে দলীয় বিভাজন দেখা দেয়। কিছু সাংবাদিক ও সংগঠন একাংশ দলীয় স্বার্থে জড়িয়ে পড়েন। এতে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ক্ষতি হয়। গত ১৫ বছরে অনেক সাংবাদিক নিজ উদ্যোগে ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করেছেন—এ বিষয়েও তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকেরাও নিজের অঙ্গীকার রক্ষা করে, যেন তারা সত্যের পথে থেকে স্বাধীনভাবে সংবাদ পাঠাতে পারেন।
বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। এ বিশ্লেষণে মূলতঃ মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বিজেসি সতর্ক করেছে যে, গণমাধ্যম কমিশনের সুপারিশ ও সাংবাদিকদের প্রস্তাবগুলো এখনো সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে, যার ফলে অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তারা আশা প্রকাশ করে, গুরুত্বপূর্ণ এই সুপারিশগুলো রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে স্থান দেবেন এবং দ্রুততার সঙ্গে এ উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন, যারা গণমাধ্যমের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।






