বাংলাদেশে সবুজ প্রযুক্তি, পাট, বস্ত্র ও ওষুধশিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগের জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানসমূহ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের উৎপাদন খাতে রূপান্তর আনা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকে চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়নার (এক্সিম ব্যাংক) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং দোংনিং এই আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। তার সঙ্গে ছিলেন চীনের ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন।
ইয়াং দোংনিং জানান, বাংলাদেশে চীনের দীর্ঘদিনের অবকাঠামো বিনিয়োগের পাশাপাশি এখন তারা উৎপাদন খাতে মনোযোগী হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রুফটপ সোলার প্যানেল, জ্বালানি, বায়োসার এবং প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরির প্রকল্প, বিশেষ করে দেশের ঐতিহ্যবাহী পাট শিল্পকে কেন্দ্র করে। তিনি আরও বলেন, এসব প্রকল্পে সরাসরি বিনিয়োগের পাশাপাশি এক্সিম ব্যাংকও অর্থায়নে আগ্রহী।
চীনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উল্লেখ করেন, ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্প তাদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। তারা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চান এবং বছরে প্রায় ১০ লাখ টন পাট ব্যবহার করে সবুজ জ্বালানি, সার, ও প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরি করতে প্রস্তুত।
চীনা এই উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন যৌথ উদ্যোগের বড় সুযোগ তৈরি হবে বলে তাঁরা মনে করেন। প্রধান উপদেষ্টা চীনের বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, চীনা সংস্থাগুলো যদি ইচ্ছা করে, তবে বাংলাদেশে উৎপাদনশীল পণ্য রপ্তানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বা হাব তৈরি করা সম্ভব—এটি উন্নত দেশগুলো ও চীনকে রপ্তানির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। পাশাপাশি ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রেও বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ড. ইউনূস আরও বলেন, চীন, বিশ্বের বড় একটি সৌরশক্তি উৎপাদনকারী দেশের হিসেবে, বাংলাদেশকে সবুজ জ্বালানি খাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি দেশের কারখানা স্থানান্তর ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি উৎসাহ দেন, কারণ দেশের তরুণ শ্রমশক্তি ও বন্ধ পাটকলগুলো এই ধরনের যৌথ উদ্যোগের জন্য উপযোগী। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি, এবং এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইয়াং দোংনিং জানান, চীন এআই ও ই-কমার্সে বিনিয়োগের সুযোগও বিবেচনা করছে, যেখানে চীন ইতিমধ্যে বৈশ্বিক নেতৃত্ব রক্ষায় কাজ করছে। তিনি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চীনা কারখানা স্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, এই অঞ্চলের বড় সমুদ্রবন্দর ও আন্তঃসীমান্ত নেটওয়ার্ক, যেমন মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে সংযোগ, বড় সুবিধা হবে।
অধ্যাপক ইউনূস এছাড়া এশীয় অঞ্চলে সমুদ্রবন্দর ও পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন এবং রেল যোগাযোগের জন্য চীনা সংস্থাগুলোর আগ্রহ স্বাভাবিক রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব উদ্যোগ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতি বাড়িয়ে দেয় এবং পণ্য রপ্তানিতে সহায়ক হয়।
বৈঠকের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা হংকংয়ের একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।






