বুলবুল আহমেদ বর্তমানে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ক্যাশিয়ার হিসেবে কর্মরত। তবে আশ্চর্য বিষয় হলো, তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিতে একটানা ১১ বছর ধরে রয়েছেন, যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মচারী তিন বছরের বেশি একই জায়গায় থাকতে পারেন না। এই দীর্ঘ সময় থাকার কারণে স্থানীয় জনমত দানা বাঁধছে নানা প্রশ্নের মধ্য দিয়ে—কীভাবে সম্ভব হলো একজন ক্যাশিয়ার এই ভূমিকায় এত দীর্ঘ সময় ধরে থাকছেন, আর এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে সৃষ্টি হয়েছে নানা গুঞ্জন। এখনও হাসপাতালটি তার আওতায় চলে আসায় তার ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যাপক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, বুলবুল আহমেদ প্রথম ২০১৩ সালে অফিস সহায়ক ও কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি পঞ্চগড়ের দেবিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রমোশন পেয়ে ক্যাশিয়ার হিসেবে বদলি হয়েছিলেন। সেখানে মাত্র এক বছর কাজের পরে ২০১৯ সালে আবার কিশোরগঞ্জে চলে আসেন। ২০২১ সালের মে মাসে তার নিজস্ব আঁচড় দিয়ে তিনি ওই কর্মস্থলে থেকে যান, আর তখন থেকেই এই হাসপাতালটিতে তার একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার ফলে তিনি নিজস্ব একটি বলয় সৃষ্টি করেছেন। হাসপাতালের অন্যান্য কার্যক্রম ও উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি, তার ক্ষমতা বেড়ে গেছে, যা বেশ কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির আড়ালে ঢাকা পড়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তিনি বিভিন্ন ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সরবরাহের ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন। এছাড়া, ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ট্রান্সপারেন্সি কম থাকায় নানা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের ঘটনায় উঠছে প্রশ্ন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনেকের মতে, সরকারি কর্মচারী হয়েও বুলবুল বিভিন্ন সময় স্বৈরাচারী শাসনামলের তুলনায় নানা অসাধু কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি নামে-বেনামে তথ্য প্রকাশ করে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে অদৃশ্য শক্তির প্রভাব ও শাসনবিরোধী নানা অভিযোগ থাকলেও, তা তদন্ত না হওয়ায় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
একই সঙ্গে, ঠিকাদার ও অন্য কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, এই দীর্ঘ সময়ের জন্য তার অপকর্ম ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগের কারণে হাসপাতালের নানা কাজে অনিয়ম চলছে। মূলত, তার পক্ষ নেওয়া নানা কর্মকাণ্ডের ফলে হাসপাতালের সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়ে, যা স্বাস্থ্য সেবার মানের জন্য ক্ষতিকর।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি হাসপাতালের বাসা বরাদ্দ, সরকারি মালামাল সরবরাহ, ও অন্য কাজে নিজস্ব স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি, এমটি ইপিআই প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত মোটরসাইকেল ব্যবহারে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এক ঠিকাদার জানান, দুটি বছর আগে তার সঙ্গে টেন্ডার করে খাবার সরবরাহের কাজ নেওয়া হলেও, বহু ধরনের হুমকি ও চাপ সৃষ্টি করে অর্থ আদায়ের অপচেষ্টা চালানো হয়।
বুলবুল আহমেদ এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, এগুলো ভুয়া এবং তাকে হয়রানি করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এসব অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নীল রতন দেব বলেন, এখনো পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। তিনি আরও বলেছিলেন, এই ধরনের ব্যাপারগুলো সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী তিন বছরের বেশি একই কর্মস্থলে থাকার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে, প্রয়োজনে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
অপরদিকে, নীলফামারী জেলার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়গুলোর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।






