গত সপ্তাহে ব্রিটেনে ঘটন্না কীর দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংকটের চিত্র উঠে এসেছে। দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা খাত এবং রাজনৈতিক দৃশ্যপট উল্লেখযোগ্যভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। এই তিনটি প্রধান কারণের কারণে ব্রিটেন বর্তমানে এক মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংকটের কারণে, ইউকে অফিস ফর স্টুডেন্টসের (ওএফএস) সতর্কতা অনুযায়ী, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে দেশের প্রায় ৫০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে। এই পরিস্থিতির মূল কারণ হলো উচ্চতর ফি, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা হ্রাস এবং বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল সংকট। দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় এখন তাদের বাজেট সহজে মেটাতে পারছে না। তারা হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করছে, অপ্রয়োজনীয় কোর্স বন্ধ করছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করতে বাধ্য হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশের শিক্ষা মানের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।
অন্যদিকে, দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট নানা চুক্তি ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে, ইইউর উদ্যোগে প্রস্তাবিত ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর প্রতিরক্ষা তহবিলে যুক্তরাজ্যের যোগদান নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বাজেট কমিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিলেও, লন্ডন খুব বেশি অর্থ দিতে রাজি নয়। এই ফলাফলের কারণে ব্রেক্সিট পরবর্তী প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অনেকটাই পিছিয়ে গেছে, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য গভীর চাপ সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া, রাজনৈতিক অঙ্গনেও নতুন পরিবর্তন দেখা গেছে। ব্রিটেনে প্রাক্তন লেবার নেতা জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে একজন নতুন বামপন্থি দলের উদ্ভব ঘটেছে। এই দলটি নিজেদেরকে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির বামপন্থী বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করছে। তবে দলের অভ্যন্তরে বিভাজন এখনই স্পষ্ট হয়ে উঠছে—একদিকে, করবিন ঠিক এই বামপন্থী শক্তির পুনরুদ্ধার করতে চান, অন্যদিকে, দলের অন্য নেতারা বলছেন, তাদের লক্ষ্য আরও প্রচলিত সমাজতান্ত্রিক দলে রূপান্তর। এই দলের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৫৫,০০০ জন, যা ব্রিটেনের বৃহত্তর সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত। ডানপন্থি মিডিয়া এটিকে অনপপ্রাসঙ্গিকতার পথে একটি আন্দোলন বলে উপহাস করলেও, এর প্রত্যাশিত রাজনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
পরিণামে, এই তিনটি সংকট ব্রিটেনের ভবিষ্যতের জন্য গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রের সংকট, প্রতিরক্ষা ব্যয়ে অচলাবস্থা এবং রাজনীতিতে নতুন শক্তির উত্থান—এই সবই দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে। সরকারি প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপের উপর নির্ভর করছে, দেশের অপ্রতিরোধ্য এই পথচলা কতটা কতটুকু সুস্থ ও স্থিতিশীল থাকবে।






