বিশ্ব রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে ভারত আসছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই দুই দেশের শীর্ষ নেতার সাক্ষাৎকারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হবে। দু’দিনের এই সফরে ভারতের নয়া দিল্লিতে পুতিন পরিচিত হবেন। ২০২১ সালে শেষবার ভারতে আসেন পুতিন, তখন থেকেই এই বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদারত্বের ২৫তম বার্ষিকী পালন হবে। সেই সঙ্গে দু’দেশের ২৩তম দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হবে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সফরের শুরুতেই, বৃহস্পতিবার রাতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারী বাসভবনে পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এই মিটিংয়ে তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। উল্লেখ্য, গত বছর মোদি মস্কো সফরে গেলে পুতিনও তাকে ব্যক্তিগত ডিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যা এরই প্রতিদান বলে ধরা হচ্ছে।
আজ শুক্রবার সকালে, পুতিনকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হবে ত্রিপক্ষীয় গার্ড অব অনার দিয়ে। এরপর তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধির স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপরই হায়দরাবাদ হাউসে শুরু হবে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ২৩তম দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলন।
আশা করা যাচ্ছে, এই বৈঠকে বড় কোনও চুক্তি বা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা হতে যদি সম্ভাবনা থেকে যায়, তবে অধিকাংশ আলোচনা হবে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও জ্বালানির মতো ক্ষেত্রগুলো নিয়ে। সূত্রের খবর, ভারতীয় কর্মীদের রাশিয়ায় কাজের সুযোগ বাড়াতে বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। এছাড়া প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে লজিস্টিক সাপোর্টের চুক্তিও হতে পারে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ওষুধ, কৃষি, খাদ্যপণ্য ও ভোক্তা সামগ্রী রপ্তানির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হবে।
সাংবাদিকদের মতে, এই বৈঠকের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে প্রতিরক্ষা। ব্রহ্মোসের উন্নত সংষ্করণ ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে আরো। এর পাশাপাশি, ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এস-৪০০-এর বাকি দুটি ইউনিট কী দ্রুত সরবরাহ সম্ভব, সে বিষয়ে স্পষ্টতা চাওয়া হতে পারে।
বৈঠকের পরে, মধ্যাহ্নভোজের পরে, পুতিন অংশ নেবেন ইন্ডিয়া–রাশিয়া বিজনেস ফোরামের অনুষ্ঠানে। সেখানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পুনরুজ্জীবন ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের রাশিয়া থেকে আমদানি বেড়ে ৬৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে রাশিয়ার ভারতীয় আমদানি মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার। ফলে বৃহৎ বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও, সার খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও এজেন্ডায় রয়েছে, কারণ রাশিয়া প্রতি বছর ভারতকে ৩-৪ মিলিয়ন টন সার সরবরাহ করে থাকে।
বৈঠকের অভ্যন্তরে, সন্ধ্যায়, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু পুতিনের সম্মানে একটি বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করবেন। একই দিন, তিনি ভারতে রুশ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক নতুন ভারত চ্যানেল উদ্বোধন করবেন। এই সফর মোটেই ক্ষণস্থায়ী নয়; চলবে প্রায় ২৮ ঘণ্টা। সফরের শেষ পর্যায়ে, রাত ন’টায়, পুতিনের ভারত সফর সমাপ্ত হবে। এই সফরটি ভারতের ও রাশিয়ার সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে উভয় দেশের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করে সামনের দিনগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।






