সাধারণ গ্রামবাসীরা ন্যায্য বিচার পাওয়ার জন্য বর্তমানে গ্রাম আদালত বা ভিলেজ কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এই ব্যবস্থা গ্রামীণ মানুষের মধ্যে যে বিরোধের সমাধান সহজ এবং দ্রুত হয়, তা ইতিবাচকভাবে পালন করছে ভূমিকা। বিশেষ করে কুড়িগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই আইনগত প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মাত্র এক বছরের মধ্যে জেলাজুড়ে ২৮০০টির বেশি মামলা এই আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে, যেখানে বিচারপ্রার্থী নারীদের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। এই তথ্য বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত অংশীজনদের সভায় জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকারের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বি এম কুদরত-এ-খুদা এবং জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা শেষে জানা গেছে, গত এক বছরে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে ৩০৩৮টি মামলা আবেদন হিসেবে ওঠে। এর মধ্যে ২৮৫২টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং বাকি মামলাগুলোর মধ্যে ২৭৫৮টি সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদে এবং ৩২৭টি জেলা আদালত থেকে গ্রাম আদালতে পাঠানো হয়। বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে নারী বিচারপ্রার্থী ৬৫৩ জন, যা মোট বিচারপ্রার্থীর প্রায় ৪০ শতাংশ। এছাড়া, এক বছরে গ্রাম আদালত মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ৩৪ হাজার ৬২০ টাকার ক্ষতিপূরণ আদায় সম্ভব হয়েছে।
তবে, প্রচারণার কমতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তা না থাকায় এই ব্যবস্থার পূর্ণ সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগছে না বলে অংশীজনদের মত উঠে এসেছে। বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে মামলার আসামির পলাতক থাকা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতি এবং মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতায় ঘাটতি রয়েছেন। এর ফলে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ছে। কর্মকর্তারা মতামত প্রকাশ করেন, নির্বিঘ্নে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হলে আরও প্রচার ও তদারকি প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রচলিত আদালতের চেয়ে গ্রাম আদালত ছোট ছোট বিরোধের দ্রুত সমাধানে অত্যন্ত কার্যকর। এজন্য, আদালতের সদস্যদের জন্য সম্মানী প্রদান, বিরোধপূর্ণ অভিযোগগুলো থানায় না পাঠিয়ে সরাসরি গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া, ইউনিয়ন পর্যায়েও নিয়মিত মনিটরিং এবং ব্যাপক প্রচার জরুরি।
উল্লেখ্য, গ্রাম আদালত ১৯৭৬ সালের গ্রাম আদালত অনু Dordি) অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত, যেখানে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩ লাখ টাকার নিচে ক্ষুদ্র বিরোধ দ্রুত সমাধান সম্ভব। এই প্রক্রিয়া আইনজীবী ছাড়া পরিচালিত হয়। ২০০৯ সালে দেশের গ্রামে এই ধরনের ক্ষুদ্র বিরোধের নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ প্রকল্প শুরু হয়, যা বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। এর নেতৃত্ব দিয়ে আছেই স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং ইউএনডিপি, যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এই কার্যক্রমটি চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করা যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।






