নওগাঁর বাইপাস সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি প্রায় ৫ শতাধিক তালগাছের ডালপালা কেটে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) কর্মীরা এ কাজ করেছেন। তবে এই কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা।
পরিবেশকর্মীরা বলেছেন, যেখানে সরকার পরিবেশের রক্ষা ও বজ্রপাতের হাত থেকে নিরাপদ থাকার জন্য তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে গাছের ডাল কেটে গাছগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করার বিষয়টি সঠিক নয়। এতে পরিবেশের ভারসাম্য অক্ষুণ্ন থাকবে না। বরং এর পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থা অবলম্বন করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল, যেমন গাছের ক্ষতি না করে লাইনের স্থানান্তর করা। এতে গাছও রক্ষা পেত, পরিবেশের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়তো।
গত কয়েক বছর ধরে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সড়কের দুই পাশে হাজারো তালগাছের চারা রোপণ হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি গাছ এখনো সুস্থভাবে বেড়ে ওঠ Affiliates(Direction)-এর গাছে। তবে নতুন করে গাছের ডাল কেটে দেওয়ার ফলে গাছগুলো ধীরে ধীরে মারা যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত আগেরবারও কিছু গাছ ডাল কেটে ফেলার কারণে মারা গেছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সড়ক সংস্কারের নাম করে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
সড়ক বিশ্লেষণে জানা যায়, নওগাঁর রামভদ্রপুর থেকে বটতলী বোয়ালিয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে সজ্জিত তালগাছের সংখ্যা হাজারের বেশি। এ গাছগুলোর উচ্চতা ১০-১২ ফুট। তালগাছের কাছাকাছি বিদ্যুতের খুঁটি থাকার কারণে, এই গাছগুলো স্বাভাবিকভাবেই সৌন্দর্য বৃদ্ধি করত। কিন্তু ডালপালা কেটে দেওয়ার কারণে এই সৌন্দর্য হারাতে শুরু করেছে।
বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, নব্বইয়ের দশকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই বাইপাসের দুই পাশে তালগাছ রোপণ করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই গাছগুলো সড়কের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন বছরে দুবার গাছের ডাল কেটে থাকলে, এবারে পুরো মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বেলাল হোসেন বলেন, এইভাবে তালগাছের মাথা কেটে দেওয়া ঠিক নয়। এর আগে কিছু গাছ ডাল কেটে মারা গেছে। তবে প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল মিলেনি। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন গাছ কাটার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিচ্ছে।
অন্য একজন বাসিন্দা মুনছুর রহমান মন্তব্য করেন, তালগাছের সংখ্যা দিন দিন কমছে। বিদ্যুতের লাইনের জন্য গাছ কাটা হলেও, গাছ থেকে বিদ্যুতের খুঁটিগুলোর দূরত্ব আরও বাড়ানো কিংবা সহজ সমাধান থাকা সত্ত্বেও গাছ কেটে ফেলা হয়। তিনি মনে করেন, এভাবে গাছ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নওগাঁর সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, গাছ আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের এমন কার্যকলাপ অনুচিত। ক্রমে গাছ না কেটে, বিদ্যুতের খুঁটিগুলোর অবস্থান পরিবর্তনের মাধ্যমেও সমস্যার সমাধান সম্ভব।
নওগাঁর পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী নাইস পারভীন বলেন, বজ্রপাত প্রতিরোধে তালগাছের গুরুত্ব অপরিসীম। এসব গাছ না থাকলে মানুষের জীবন সংশয় দেখা দেয়। যেখানে সরকার পরিবেশের জন্য গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে বিদ্যুৎ বিভাগ পরিবেশের বিপরীত কাজ করছে। গাছের ক্ষতি বন্ধের জন্য তিনি হুঁশিয়ারি দেন, না হলে কঠোর আন্দোলন করতেও প্রস্তুত তারা।
এ বিষয়ে নেসকো উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ কালাম বলেন, তালগাছগুলো সম্ভবত লাইন বসানোর পরে রোপণ করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, লাইন সরাতে হলে অন্য জমির ওপর দিয়ে যেতে হবে, যা সাধারণত স্থানীয় ব্যক্তিরা বাধা দেয়। লাইন স্থানান্তরের জন্য অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি তিনি দেখিয়ে দেন। বিদ্যুৎ বিভাগ প্রয়োজন বুঝলে লাইনের স্থানান্তর করবে, অন্যথায় স্থানীয় ব্যক্তিরা বাধা দিলে কাজের ব্যাঘাত হবে।






